বান্দরবানে নিজ ঘরে ফিরছে বাস্তুচ্যুত বম পরিবারগুলো

বান্দরবানের পাহাড়ি গ্রামগুলো থেকে চলে যাওয়া বম পরিবারগুলো ফিরে এসেছে নিজ ভিটেমাটিতে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শত শত বম পরিবার যার যার গ্রামে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কুকি চিনের সহিংসতা ও পরবর্তীতে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরুর পর এসব পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়। নিজের বাড়িতে ফিরতে পেরে সন্তুষ্ট বম জনগোষ্ঠীর মানুষ।

গত এক বছর আগে, বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী বম পাড়া সুংসাংপাড়ার দৃশ্য ছিল যেনো এক নিষিদ্ধ উপত্যকা। কেউ কোথাও নেই, সুনসান চারদিক। বম জনগোষ্ঠীর ডজনখানেক গ্রাম ঘুরে যমুনা নিউজের অনুসন্ধানে উঠে আসে, নিজ এলাকা ছেড়ে পাশের দেশ কিংবা অজানা উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে বমরা। বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কুকি চিনের অভিযানের প্রেক্ষাপটে পাহাড়ি জনপদ থেকে এভাবে এলাকাছাড়া হওয়া নিয়ে বছরজুড়ে ছিল আলোচনা।

গত বছরের বম পাড়া সুংসাংপাড়ার দৃশ্য
তবে ঠিক এক বছর পর সেই সুংসাংপাড়াসহ অন্যান্য বম গ্রামের দৃশ্য বদলেছে। কোলাহল ফিরেছে গ্রামগুলোয়, নিজের ভিটেমাটিতে ফিরেছে পালিয়ে যাওয়া পরিবারগুলো। দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকায় ঘরবাড়ি ও চাষাবাদের জমি নষ্ট হয়েছে। তাই শুরু করতে হচ্ছে নতুন করে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ অপেক্ষার পর নিজ বাসায় ফিরতে পেরে খুশি তারা। আবার নতুন করে তাদের জীবন শুরু করতে চান বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে, সেনাবাহিনীর তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত বান্দরবান জেলায় ২৮টি বম পাড়ায় ১২২টি পরিবার ফিরে এসেছে। জনসংখ্যার হিসেবে ৩২৮ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দার্জিলিং পাড়ায়—২২টি পরিবার, খ্যামতাই বা জোরবারং পাড়ায় ১৬টি, বাকলাই পাড়ায় ১৫টি, ক্যাপলং পাড়ায় ৯টি, কানা পাড়ায় ৭টি, মুলফি পাড়ায় ৭টি, মুনলাই পাড়ায় ৫টি, রামথার পাড়ায় ৫টি, সিমতিলাংপি ও পাইন্দু পাড়ায় ৪টি করে পরিবার ফিরেছে ঘরে। এছাড়া, জেলার প্রতিটি বম পাড়ায় ২–৩টি করে পরিবার ফেরত এসেছে।

বম সোশ্যাল কাউন্সিল ও জেলা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য লাল জার লও বম বলেন, বিভিন্ন গ্রামের যারা আটকের ভয়ে কিংবা প্রাণের ভয়ে যারা পালিয়ে ছিলেন তারাও ফিরতে শুরু করেছেন।

১৬ ইস্ট বেঙ্গল বান্দরবান রিজিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আতিকুর করিম বলেন, আশপাশের সবকিছু স্বাভাবিক চলছে। সুতরাং এখনও যেসব বম পরিবার পলাতক রয়েছে তারাও ফিরে আসবে।

কুকি-চীন সহিংসতার কারণে শুধু বম সম্প্রদায় নয়, একপ্রকার অবরুদ্ধ ছিল বান্দরবান। জেলার অধিকাংশ পর্যটন স্পটও ছিল বন্ধ। সম্প্রতি রুমার বগালেক, থানচির একটি এলাকা খুলে দেওয়া ও বম পরিবারগুলো ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে বার্তা এসেছে—পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা অনেক দূর এগিয়েছে।