
কথিত ‘ইসলামি খেলাফত’কে কেন্দ্র করে মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে বিস্ফোরক মন্তব্য মন্তব্য করেছেন। ইতোমধ্যে তার সেই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। হিজবুত তাহারীরের কথিত ‘ইসলামি খেলাফত’ ইস্যুতে মাঠে নামা ও তুলসী গ্যাবার্ডের এ বিষয়ে মন্তব্যকে ভারতের নয়া ষড়যন্ত্র মনে করছে বিশ্লেষকরা।
সূক্ষ এ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সমালোচকরা বলছেন, ভারত প্রথমে চেষ্টা করা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, যাতে ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে কোন বিস্ফোরক মন্তব্য করবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি! ট্রাম্প মোদির সাম্প্রতিক বৈঠকে ভারতীয় সাংবাদিকদের পূর্বপরিকল্পিত বাংলাদেশ মেশানো প্রশ্ন বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে তাদের দিকে। কৌশলী ট্রাম্প বাংলাদেশি ইন্ডিয়ান আগ্রহকে পাশ কাটিয়ে গেলেন কৌশলে।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের একটা পক্ষ মনে করছেন, ট্রাম্পের মাধ্যমে ভারতীয় পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের টার্গেট ছিল মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের ভারত সফর। সেই সফরকে উদ্দেশ্য করে মাঠে নামে পর্দার আড়ালের কুশিলভরা। এবার মাঠে খেলা হলো হিজবুত তাহারিরে কথিত ‘ইসলামি খেলাফত’ কার্ড। এই সংগঠনকে পরিকল্পিতভাবে সামনে আনা হলো তুলসী গ্যাবার্ডের ভারত সফরের এক সপ্তাহ আগে। বায়তুল মোকাররমের সামনে এক বড় জামায়াত করল নিষিদ্ধ সংগঠন তাহরির। তাদের হাতে সুস্পষ্টভাবে ইংরেজি হরফের লিখা খেলাফতের ব্যানারকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রদর্শন করা হলো। যদিও হিজবুত তাহারীর মাঠে নামার পর তাদের ঠেকাতে কঠোর হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে। সরকারের এই অ্যাকশনে থাকার পরও ভারত নোংরা খেলা মেতেছে। পরিকল্পনা মাফিক তারা বারবার বিষয়টি সামনে এনে ভারত বুঝাতে চাচ্ছে, তাদের অন্য কিছু উদ্দেশ্য ছিলো এই বোঝানো যে, বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফতের আন্দোলন চলছে, যা কিনা ট্রাম্প প্রশাসনকে সহজভাবেই বোঝানো যাবে। যদি ট্রাম্পকে বোঝানো যায় বাংলাদেশে খেলাফতের আন্দোলন চলছে, তবে খুব সহজেই তাকে রাগান্বিত করা যেতে পারে।
এদিকে সোমবার ভারতীয় এনডিটিভিতে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাভার্ডের এক সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ জড়িয়ে যখন প্রশ্ন করা হয়। তখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তুলসী গ্যাভার্ড তার সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র খুবই উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বজুড়ে ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও তিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তবে ধর্মীয় সহিংসতা তাদের উদ্বেগের মূল বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।
সাক্ষাৎকারে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের কথায় ইসলামী খেলাফতের আদর্শের কথা বিশেষভাবে উঠে আসে। গ্যাভার্ড বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ধরনের খেলাফতের আদর্শ চিহ্নিত করে পরাজিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ট্রাম্প এ ধরনের আদর্শকে কট্টর ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এখন বাংলাদেশের সচেতন মহলের মনে একটাই প্রশ্ন, তুলসী গ্যাবার্ডের ভারত সফরের এক সপ্তাহ আগেই কেন বাংলাদেশে একটা নিষিদ্ধ সংগঠন ইংরেজি লেখা সম্বলিত খেলাফতের ব্যানার নিয়ে মাঠে নেমেছিল? বাংলাদেশ সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরেও তুলসী গ্যাবার্ডই কেন এই বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন বা এটা নিয়ে এতটা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহারীরের কথিত ‘ইসলামি খেলাফত’ ভারতের নয়া ষড়যন্ত্র। আর ‘হিন্দু’ তুলসী গ্যাবার্ডের এ বিষয়ে কথা বলাটাও সেই ষড়যত্রের অংশ মনে করছেন তারা।