মহসিন কবির: বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এবছরই নির্বাচন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, জিনিসপত্রের দাম কমানোর ব্যাপারে এই সরকারের কোনো উদ্যোগ নিতে আমরা দেখিনি। পাঁচ মাসে এ সরকারের কোনো সাফল্য নেই। অর্থনীতিতে যিনি নোবেল পেয়েছেন, তিনি অর্থনৈতিক কোনো গতি দিতে পারেননি। ড. ইউনুসকে খুবই সম্মান করি। কিন্তু যেটা বাস্তব সেটা বলতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি, এ বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এ কারণে আমরা সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে পরে-এমন বার্তা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
এরই মধ্যে নির্বাচনি দলগুলোর শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। ভোটারের আস্থা অর্জনে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন তারা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।
সমমনা অন্তত দশটি দলের শীর্ষ নেতা প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেন, বিএনপি জোটগতভাবে ভোট করবে কিনা-তা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত নেবে বলে তাদের জানিয়েছেন। তবে এখন এলাকাভিত্তিক তারা কাজ করছেন।
পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতেও রাজধানীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নেতাদের মতে, জোটগতভাবে হলে ঢাকায় অন্তত তিনটি আসন তারা চাইবেন। তারা আশা করছেন-শিগগিরই নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ জানা যাবে।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে-এমন আশা করেই মাঠে নেমেছেন রাজনৈতিক তারা। পাড়া-মহল্লায়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন অনেকেই। যদিও এসব নেতার কেউ কেউ নিজ নিজ এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় বাধার কথাও বলেছেন। সেক্ষেত্রে বিএনপির কেন্দ্র থেকে প্রতিটি জেলায় সমমনা দলগুলোর শীর্ষনেতাদের সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির সমমনা দলগুলোর যেসব নেতা নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন-বগুড়া-২ আসনে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-৮ ও বাগেরহাট-১ আসন থেকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ভোলা সদর আসনসহ ঢাকার একটি আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি’র মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, ঢাকার একটি আসন থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ফেনী-৩ আসন থেকে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক ও ঝিনাইদাহ-২ আসনে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। এদিকে গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছিলেন, তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আর অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ভোটের মাঠে নিজের বদলে তার বড় ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুককে নামাচ্ছেন। জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ) এলাকায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওমর ফারুক। এছাড়া এলডিপির চট্টগ্রাম-৭ আসনে নুরুল আলম, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, ময়মনসিংহ-১০ আসনে সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ এবং গোপালগঞ্জ-১ আসনে সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক। এদিকে গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ঢাকায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ কয়েকটি সমমনা দলের শীর্ষ নেতা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন।
দলগুলোর নেতারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আর সেজন্য দরকার প্রকৃত অর্থেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। সেজন্যই জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা কর্মসূচি নিয়ে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ করছেন তারা। সাধারণ মানুষের মন জয় ও ভালোবাসা অর্জনের নানারকমের ইতিবাচক সাংগঠনিক কর্মসূচির উদ্যোগ নিচ্ছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। তারা বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা নিয়েও কাজ করছেন বলে জানা যায়।
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘নির্বাচনের এখনো সময় নির্ধারণ হয়নি। তবে আমাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি রয়েছে। এলাকাকেন্দ্রিক সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। জনগণের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।’
সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দলগতভাবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আমরা এক ধরনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। আমাদের দল নিবন্ধিত। ২০১৮ সালে আমরা নির্বাচন করেছিলাম। এবারও আমাদের রাজনৈতিক একটা প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচনি এলাকাকেন্দ্রিক কিছু রাজনৈতিক কাজ, সাংগঠনিক কাজ, সংগঠনের কাজ শুরু করেছি। নিয়মিতই সম্ভাব্য এই দুটি নির্বাচনি এলাকায় জনগণের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রক্ষা করছেন তিনি। নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে সাইফুল হক আরও বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আলাপ-আলোচনা চলছে। বিএনপির সঙ্গে আমরা যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম, সেখানে অননাষ্ঠুনিক কিছু কথাবার্তা আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথাবার্তা হয়নি।’
২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। আগামীর নির্বাচনেও একই আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ২০১৮ সালে জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। স্বৈরাচার সরকার রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে নিয়েছে। তবে জনগণ আমাকে সব সময় সমর্থন জানিয়ে আসছে। সে ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনে নির্বাচন করার সব ধরনের প্রস্তুতি আমার রয়েছে। নিয়মিতই এলাকায় গণসংযোগসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছি।
এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেছেন, জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছে। আগামীতে এই আসন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। নিয়মিতই এলাকার জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। যে কোনো সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত আছি।