কিছুটা নিয়ন্ত্রণে পাঁচদিন ধরে চলা লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল

অবশেষে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে লস অ্যাঞ্জেলেসের পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তে দুটি বড় দাবানল। গত পাঁচদিন ধরে চলছিল এই ভয়াবহ তাণ্ডব। ঝড়ো বাতাসের গতিবেগ কমে আসায় দমকল বাহিনী আগুনের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ পেতে শুরু করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।

এ ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। ১০ হাজারের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৃতের সংখ্যার পাশাপাশি এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া ভয়াবহ এই দাবানলের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে প্রধান কারণ ছিল প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস।

ক্যালিফোর্নিয়ার ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, গতকালের আগপর্যন্ত প্যালিসেইডস ও ইটনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার মাত্রা ছিল শূন্য শতাংশ। অবশেষে প্যালিসেইডসের আগুন ৮ শতাংশ এবং ইটনের আগুন ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যদিও এরই মধ্যে দাবানলে এই দুই অঞ্চলের প্রায় ৩৪ হাজার একর পুড়ে ছাই হয়েছে।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, প্যালিসেইডসে ২০ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে।

অঞ্চলটির আগুন ৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ইটনের আগুন ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুড়েছে ১৩ হাজার ৯৫৬ একর এলাকা। লিডিয়ায় ৩৯৫ একর পুড়েছে, নিয়ন্ত্রণে এসেছে ৭৫ শতাংশ আগুন। হার্স্ট অঞ্চলে ৭৭১ একর পুড়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে ৩৭ শতাংশ।

কেনেথ অঞ্চলে ৩৫ শতাংশ আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। নতুন করে আগুন ছড়ানো রোধ করতে সক্ষম হয়েছেন অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পাঁচটি দাবানলের আগুন নেভাতে এখনো সংগ্রাম করছেন অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা।

এদিকে সেখানে এর মধ্যেই শুরু হয়েছে ব্যাপক লুটপাট। সেখানে লুটপাট থামাতে জারি করা হয়েছে কারফিউ। লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লুটপাটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা উদ্ধারকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া দাবানল এলাকায় সর্বসাধারণের উপস্থিতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদি কেউ কারফিউ লঙ্ঘন করে বাইরে বের হয়, তাকে ১ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির কর্মকর্তারা।

রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন লস অ্যাঞ্জেলেসকে ‘যুদ্ধের দৃশ্য’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন বাস গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে সাফল্যের খবরও পাওয়া গেছে। তবে আগামী সপ্তাহের শুরুতে বাতাসের তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য লস অ্যাঞ্জেলেসকে প্রস্তুত রাখা ও জীবন বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করা আমাদের প্রথম কাজ।’

এদিকে আগুন নেভানোর কাজে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় পানি। কারণ, গত কয়েক মাস ধরে ক্যালিফোর্নিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি। ফলে প্যাসিফিক প্যালিসেইডস এলাকার কিছু হাইড্রেন্ট (আগুন নেভানোর জন্য পানি সরবরাহ পাইপ) শুকিয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জেনিস কুইনোনেস বলেন, শহুরে পানি সরবরাহব্যবস্থা দিয়ে দাবানল নেভাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন তারা।

ক্যালিফোর্নিয়ার পানি সংকট নিয়ে চটেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সরকার অযোগ্য। এই পানিসংকটের কারণে আগুন নেভানোয় বাধা আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আগুন নেভাতে যা যা দরকার সব করবে সরকার।

সূত্র: রয়টার্স,বিবিসি,সিএনএন।