আবু সাঈদের মরদেহ পুলিশ আড়াই ঘণ্টা গুম করে রেখেছিল: নিহতের বড় ভাই

রংপুর ‍ব্যুরো:

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের লাশ পুলিশ আড়াই ঘণ্টা গুম করে রেখেছিল এবং পুলিশ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাতেই লাশ দাফনের জন্য প্রবল চাপ তৈরি করেছিল পরিবারের ওপর। এই দাবি করেছেন নিহতের বড়ভাই রমজান আলী।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে শহীদী মার্চে যোগ দেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকতা মঞ্চে এই দাবি করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন, ছোটভাই আবু হোসেন, বোন সুমি বেগম, শহীদ মানিকের মা নুরজাহান বেগম ও ভাই রতন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আবু সাঈদ এবং মানিকের পরিবারকে কালো ব্যাচ পরিয়ে দেন।

এ সময় আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ১৬ জুলাই রংপুর মেডিকেল কলেজে লাশ নিতে গেলে পুলিশ রমজান এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাশ ‘ছিনতাই’ করে আড়াই ঘণ্টা গুম করে রেখেছিল। পরে রাতেই স্থানীয় ইউএনও, ওসি এবং আওয়ামী লীগ নেতারা বাড়িতে গিয়ে লাশ দাফনের জন্য কবর খোড়ার চাপ দিয়েছিল। এ সময় বাড়ি থেকে তার পিতা এই খবর মোবাইল ফোনে জানালে তিনি বলেছিলেন এখনও লাশই পাইলাম না। তাহলে কবর খুড়ে লাভ কি।

আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী

আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী বলেন, ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া নিয়েও পুলিশ নাটক করেছিল। রাতে বাড়িতে যখন আমার বাবা মায়ের ওপর আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রশাসনের লোকজন লাশ দাফনে প্রবল চাপ তৈরি করেছিল। তখন তারা অসহায় হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তারা পরের দিন সকাল ৭টার মধ্যেই দাফন এবং মসজিদে জানাযা করার জন্য নির্দেশ দেয়। তখন আমরা আরও ভয় পেয়ে যাই। আমি বলি কবর খনন করতেই তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। তখন তারা আমাদের কবর খোঁড়ার বিষয়টি দেখভাল করে। পরে ছাত্র ভাইদের সহোযোগিতায় মাদরাসা মাঠে জানাযা করেছি এবং ১১ টায় দাফন করেছি। এ সময় ছাত্রদের মাত্র ১৫ মিনিট সময় দিয়েছিল পুলিশ।

তিনি বলেন, আমার ভাইকে গুলি করার সাথে শেখ হাসিনা, ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারী, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের লোকজন এবং পুলিশ জড়িত। মামলায় ১৭ জনের নাম দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাতনামাদের আসামী করা হয়েছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি শেখ হাসিনা দেশে এনে বিচারের দাবি জানান। বলেন, জড়িতদের ফাঁসি দিতে হবে।

এ সময় শহীদ সাঈদ ও মানিকের পরিবার তাদের সন্তানসহ যারা গণহত্যার শিকার হয়েছেন তাদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। পরে তারা শহীদী মার্চে অংশ নেন।