ঋতুপর্ণা ফিরলেন নিজের ট্রেডমার্ক বাঁ পায়ের শটে, দলকে নিলেন এশিয়ার মঞ্চে

বন্ধুর সঙ্গে কফি খেতে চাওয়ার ছোট্ট আবদার করে নেটিজেনদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ঋতুপর্ণা চাকমাকে। সামাজিক মাধ্যমে তাকে নিয়ে একের পর এক ট্রলে দেখতে হয়েছিল মানসিক নিপীড়নের চূড়ান্ত রূপ। সেই ঋতুপর্ণা ফিরলেন নিজের ট্রেডমার্ক বাঁ পায়ের শটে। বাংলাদেশকে নিলেন এশিয়ার মঞ্চে। লাল-সবুজের মুকুট হয়ে ভাসছেন সমর্থকদের প্রশংসায়।

ম্যাচ জয়ের পর ঋতু
বড় মঞ্চে প্রতিপক্ষকে ধ্বসিয়ে দিতে নিজেকে গড়ে তুলেছেন অপরিহার্য হিসেবে। যার সবশেষ দৃশ্য মঞ্চায়িত হলো এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে। শক্তিশালী মিয়ানমারের স্বপ্ন চূর্ণ করে আরও একবার ট্রেডমার্ক উদযাপন। স্তব্ধ করে দিলেন স্বাগতিক সমর্থকদের। ঋতুপর্ণা চাকমা—যার বাঁ পায়ে ভর করে এশিয়ান মঞ্চে এখন বাংলাদেশ।

চাইলে বলাই যায়, ঋতুপর্ণার জন্য এ আর নতুন কি? সবশেষ সাফ ফাইনালেই তো বাঁ পায়ের সেই ট্রেডমার্ক শটে নেপালের স্বপ্ন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ঋতু। শুধু কি তাই? ব্যতিক্রমী উদযাপনে চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন দশরথের হাজার বিশেক নেপালি সমর্থককে। অথচ ঋতুপর্ণার এই আত্মবিশ্বাসের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বদেশী একদল সমর্থক!

নানা অভিযোগে পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন ঋতুসহ ১৮ ফুটবলার। সেখানে কোনো এক বক্তব্যে ঋতু শুধু বলেছিলেন, বন্ধুর সঙ্গে কফি খেতে যেতেও কোচের মানা। ব্যস, মোক্ষম অস্ত্র পেয়ে যান সমালোচনাকারীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় ট্রোল। একের পর এক তীর্যক মন্তব্যে অসহায় করে তোলা হয় ঋতুর জীবন। মানসিক নিপীড়নের সেই সময়টা ঋতুপর্ণা পার করেছেন দাঁতে দাঁত চেপে। ছিলেন মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায়।

বুধবার আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সমালোচনার নামে যারা ঋতুপর্ণার পথের কাঁটা হয়ে উঠছিলেন, বাঁ পায়ের ট্রেডমার্ক শটে তাদের উচিত শিক্ষায় দিলেন আরসি সেভেন্টিন। উদযাপনে গুলির নিশানায় এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে চাইলেন নারী ফুটবলের অন্তরায় সেই সব সমালোচকদের।

ঋতুপর্ণারা এমনই। অপেক্ষা করেন, কিন্তু দমে যান না। পাহাড়ি কন্যার জীবনটাই তো সংগ্রামের এক গল্প। শৈশবেই কৃষক বাবাকে হারানো ঋতুর জীবনে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি—একমাত্র ছোট ভাইয়ের অকাল মৃত্যু। তবে হার মানেননি তিনি। সেই শোককে করেছেন শক্তি, হয়েছেন বিধবা মায়ের আশার আলো, লাল-সবুজের স্বপ্নকন্যা, জাদুর কাঠি। যার পরশে বিশ্বমঞ্চে আরও উজ্জ্বল লাল-সবুজের পতাকা।

কী-বোর্ড চেপে যারা কুৎসিত মানসিকতায় ঋতুপর্ণাদের স্বপ্নের পথে কাঁটা হতে চায়, মাঠের পারফরম্যান্সে ফুল হয়ে সৌরভ ছড়িয়ে তাদের জবাব দিতে প্রস্তুত অদম্য এই পাহাড়ি কন্যা।