
ইসরায়েলি বিমান হামলা ও যুদ্ধের কারণে ইরানের বিভিন্ন শহর থেকে ব্যাপক জনস্রোত পালাতে শুরু করায় দেশটির অভ্যন্তরে এবং বিদেশে অবস্থানরত ইরানিদের ওপর আর্থিক ও ইন্টারনেট সেবা বিপর্যয় নেমে এসেছে। ব্যাংকিং সিস্টেম ক্র্যাশ, এটিএম থেকে টাকা তোলা অসম্ভব, এবং ইন্টারনেট সেবা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। এক প্রতিবেদনে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির সেপাহ ব্যাংকের সমস্ত ডেটা ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে হ্যাকার গ্রুপ ‘প্রিডেটরি স্প্যারো’। এমন অবস্থায়, দেশজুড়ে এটিএমগুলি নগদ টাকা দিতে ব্যর্থ, এমনকি তেহরান ও অন্যান্য প্রদেশে অনেক মেশিন সম্পূর্ণ খালি। মেলি, পাসারগাদ ও এগতেসাদ-ই নভিন ব্যাংকের সেবাও ব্যাহত হচ্ছে বলে ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন। সরকারি ব্যাংকগুলির দাবি সত্ত্বেও, মানুষ ‘১০টি এটিএম পরীক্ষা করেও টাকা পাচ্ছেন না’ বলে অভিযোগ করছেন।
তেহরান ও অন্যান্য শহরে ইন্টারনেটের গতি অত্যন্ত ধীর, অনেক জায়গায় সংযোগই কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইরানসেল ও অন্যান্য ইন্টারনেট প্রদানকারীর সেবা বন্ধ হওয়ায় মানুষ ডিজিটাল লেনদেন করতে পারছেন না।
এদিকে, বিদেশে অবস্থানরত ইরানিরা (বিশেষত তুরস্ক, ইউএই ও ইউরোপে) রোমিং সেবা বন্ধ থাকায় ফোনে কোড পাচ্ছেন না, ফলে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অনলাইন লেনদেনও অচল।
আইটি বিশেষজ্ঞ সাহার তাহভিলি বলেছেন, ‘ইরানের সিস্টেমগুলি আধুনিক সাইবার হামলার জন্য প্রস্তুত নয়’। যুদ্ধের সময় সাইবার হামলার লক্ষ্য থাকে পরিবহন, ব্যাংকিং, জ্বালানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেশটিকে অকার্যকর করে দেয়া।
দেশজুড়ে অচলাবয়স্থায় ইরানের সাইবার সিকিউরিটি কমান্ড সরকারি কর্মকর্তাদের পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, সম্ভবত ইসরায়েলি টার্গেটেড হামলা (যেমন গত বছর হিজবুল্লাহর পেজারে হামলা) রোধ করতে।
অনেক ইরানি ছুটিতে বা কাজে বিদেশে গিয়ে ফ্লাইট বাতিলের কারণে ফেরত যেতে পারছেন না। এছাড়াও ব্যাংকিং সিস্টেম অচল থাকায় হোটেল বিল, খাবার বা জরুরি খরচ মেটাতে পারছেন না। ক্রিপ্টোকারেন্সি (ইউএসডিটি/টেদার) ব্যবহারের চেষ্টা করলেও, প্ল্যাটফর্মগুলি ইরানি ট্রানজেকশন ব্লক করছে।
ডিজিটাল লেনদেন বন্ধ থাকায় স্বর্ণের দোকানগুলি বন্ধ, অনলাইন স্বর্ণ বিক্রির প্ল্যাটফর্মও ডাউন। সেনা ও সরকারি পেনশনভোগীরা (যারা সেপাহ ব্যাংক ব্যবহার করেন) তাদের মাসিক ভাতাও তুলতে পারছেন না।
বলা যায়, ইসরায়েলি হামলা ও সাইবার আক্রমণের ফলে ইরানের অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। এখন পর্যন্ত ইরানি কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা ও গোয়েন্দা বাহিনীকে সতর্ক করেছে। বিশ্বজুড়ে ইরানিরা নিষেধাজ্ঞা, ব্যাংকিং ব্লক ও ইন্টারনেট সেন্সরশিপের মধ্যে আটকে পড়েছেন।
তবে, অবস্থা দ্রুত পরিবর্তনশীল। কারণ— নতুন হামলা বা সাইবার আক্রমণ হলে ইরানের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।