
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ৯২ শতাংশ মুসলিম। বাংলাদেশের আলেম সমাজ শৃঙ্খলা মেনে চলে। যারা রাষ্ট্র ক্ষমতা যাওয়ার জন্য চিন্তা করছেন, তাদের আলেম সমাজকে নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, আলেমদের অভিলাষ নেই। আলেম সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে ভাবতে হবে। যে নেতৃত্ব দিতে চায় তার সবার সমার্থক দরকার আছে। তিনি আরো বলেন, দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। নাহিদ ও সারজিস সবাই মাদরাসার ছাত্র। তাদের মধ্যে জ্ঞানের ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে। অনেকেই এই (মাদরাসার) পরিচয় দিতে চান না। তাদের এই জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে।
আজ সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর মহাখালিস্থ গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের পেশাজীবী অজনৈতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদারেছীনের উদ্যোগে দেশের পীর-মাশায়েখ, ইসলামিক স্কলার শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ‘বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মুসলিম রয়েছে। ইতোমধ্যে নেতৃত্বের জন্য ছোট-খাট যুদ্ধ হচ্ছে। কে নেতৃত্ব দেবে? সউদী আরব নেতৃত্ব দেবে না তুরস্ক নেতৃত্ব দেবে। যেই নেতৃত্ব দেক, নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে সবারই কিন্তু শক্তির দরকার আছে। আজকে মাহাথির মুহাম্মদের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে অতিক্রম করে যাবে ইন্দোনেশিয়া।
ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া খুবই দ্রত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে সর্ববৃহৎ মুসলমান রাষ্ট্র। এই শতাব্দি শেষে বাংলাদেশেসহ মুসলমানের জনসংখ্যা দেড়শ’ কোটি হবে। তখন বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এরদোগান সুপরিচিত তিনি একজন মুসলমাদেশের নেতা। ইন্দোনেশিয়া প্রেসিডেন্ট শক্তিশালী একজন মুসলিম দেশের নেতা। আগামী দিনে বাংলাদেশে যিনি ক্ষমতায় আসবেন এটা আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করে রেখেছেন।
তিনি বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক শক্তি, জনসংখ্যাগত যে শক্তি তার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সেই হিসেবে আমাদের স্থানটা হবে আমরা বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম শক্তিশালি জনসংখ্যার মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে স্থান লাভ করবো।
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আমাদের সমাজ এখন শৃঙ্খলা ভেঙে গেছে। কিশোর গ্যাংসহ নানা অপরাধে আমাদের সমাজের শৃঙ্খলা ভেঙে গেছে। এমন কোনো অপরাধ নেই যা বর্তমান বিশ্বে সংঘটিত হচ্ছে না। বিশ্বের অনেক সম্পদশালী রাষ্ট কিন্তু সমাজটাকে ঠিক করতে না পারার কারণে তারা আজ অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশের সৌভাগ্য বাংলাদেশে আলেম সমাজ খুবই সুশৃঙ্খল। বাংলাদেশের আলেম সমাজ অত্যান্ত সংগঠিত। বাংলাদেশের আলেম সমাজ সমাজের সকল দায়িত্বশীল কাজ করছে।
আমাদের মাদরাসার শিক্ষার্থীরা পরিবার তৈরি করছে। মাদরাসায় পড়া মেয়েটা কিন্তু সুন্দরভাবে পরিবারের দায়িত্ব পালন করছে। আদর্শ মানুষ তৈরি করছে। এই দেশে ৫ লাখ মসজিদ আছে, কয়েক লাখ কাজী আছে, ৫ লাখ মসজিদের সাথে ইমাম মুয়াজিন আছে। আলিয়া মাদরাসায় ৩ লাখ শিক্ষক ও ৭০ লাখ ছাত্র-ছাত্রী আছে। কওমী মাদরায় লাখ লাখ ছাত্র আছে। যারা আগামী দিনে রাষ্ট্র ক্ষমতার চিন্তা-ভাবনা করছেন তাদের ভাবনায় আলেম সমাজকে রাখা উচিত, তাদের নিয়ে ভাবা উচিত। এদেশের আলেম সমাজ সব সময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো।
জমিয়াত সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন বাংলাদেশের ৮ হাজার মাদরাসার ৩ লাখ শিক্ষক ও ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর একক সংগঠন। আগামী দিনে এদেশের আলেম সমাজ যাতে সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয় সে দিক বিবেচনা করতে হবে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আয়োজিত এই ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, জামায়াতে ইসলামির সহকারী মহাসচিব মাওলানা আব্দুল হালিম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা খলীলুর রহমান মাদানী, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা জয়নুল আবেদীন, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু জাফর খান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফি, মহাসচিব মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ফয়জুল হক, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র মোহাম্মদ ওসমান বিন হাদী, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি মাওলানা রুহুল আমীন, জমিয়তে হিযবুল্লাহ’র নাজেমে আ’লা ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শরাফত আলী, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল।
ইফতার মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেন- ছারছীনা দরবার শরীফের পীরসাহেব মাওলানা শাহ আবু নছর নেছার উদ্দীন আহমদ হুসাইন।