ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক প্রফেসর এম শাহিদুজ্জামান বলেছেন, হাসিনার ভারতের সাথে করা গোপন চুক্তি এমনও ছিল যে, বাংলাদেশে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর স্থায়ী উপস্থিতি থাকবে। প্রয়োজনে তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে।
তিনি বলেন, ২৫ মাইল শিলিগুড়ি করিডোর, দক্ষিণে ফেনী নদীর কাছের অংশ যেখান থেকে ত্রিপুরাতে যেতে হলে শর্টেস্ট পয়েন্ট রয়েছে- এসব জায়গায় ভারতীয় সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি থাকবে। এই ধরনের চুক্তি সবচেয়ে স্পর্ষকাতর যা গোপন রাখা হয়েছিল বলে জানান এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।
সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবের সহাকারী সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে প্রফেসর এম শাহিদুজ্জামান এসব তথ্য জানান। এসময় ভারতের এই বছরের শেষের দিকে ভারতীয় বাহিনীর একটি ব্রিগেড বা ডিভিশন বাংলাদেশে স্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল বলেও জানান তিনি।
হাসিনার গোপনচুক্তির কয়েকটি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সমুদ্রপথে ভারতীয় নৌবাহিনীর অবজারভেশন থাকবে, রাডার স্থাপনাগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। উত্তরবঙ্গে কোনো অবস্থাতেই আমরা চীনকে যেন কোনো ডেভেলপমেন্টের দায়িত্ব না দিই। ভারত যাতে নিজের ইচ্ছায় যখনই সে প্রয়োজন মনে করবে ২৫ মাইল করিডোরকে সমৃদ্ধ করে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ২৫ থেকে ৫০ কিলোমিটারের একটা অংশ ভারতের সামরিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাবে।
‘‘সেজন্য আমাদের সবচেয়ে কাছে ভারতের হাসিমারা ও বাগডোগরা বিমানঘাটিতে তারা উন্নতমানের মিসাইল ও এসএস৪০০ মিসাইলগুলো মোতায়েন করেছে, উন্নতমানের বিমানগুলো বসানো হয়েছে। এর জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সামরিক ঘাটি, তাদের গোয়েন্দা বাহিনীর উপস্থিতি, রংপুরে তাদের নিরাপত্তা অফিস এগুলো ছিল সবচেয়ে স্পর্ষকাতর বাস্তবতা’’ বলেন তিনি।
এসব স্পর্ষকাতর চুক্তি হাসিনা নিজে থেকে সই করেছে উল্লেখ করে প্রফেসর এম শাহিদুজ্জামান বলেন, এগুলো পার্লামেন্টে কখনও আলোচিত হয় নাই। তার ক্যাবিনেট মেম্বারদের কয়জন জানতো তাও সন্দেহ আছে। এই প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে যিনি ভারতের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সেই প্রণব মুখার্জির সময় থেকেই। প্রণব মুখার্জিই বিজেপির সাথে হাসিনার সম্পর্কের সূচনা ঘটিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, এখনও আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী ও এই সরকারও অনেকাংশে অবলোকন করতে পারছে না বা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের পররাষ্ট দপ্তর অগ্রাহ্য করছে যে, যেকোনো ভারত সরকারের চেয়ে এই ভারত সরকারকে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে দূরত্বে রাখা অপরিহার্য। কেননা এই সরকার সত্যি সত্যি বিশ্বাস করে বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভূখণ্ডের সাইজ আরও ছোট করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক বলেন, ভারতের জেনারেলরা কিন্তু বারবার বলেছে বাংলাদেশের দুটি অংশ- একটি পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ এবং উত্তরের অংশ- এই দুটোকে তারা দখল করে নেবে, বাংলাদেশকে সংকোচিত করবে এবং সেখানে বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীকে রিপোপুলেট করবে। এটা কিন্তু তাদের ঘোষিত নীতি। জেনারেল শর্মা, মেজর জেনারেল বখশীর মতো মিডিয়াতে কথা বলা অত্যন্ত পরিচিত ভারতীয় অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলরা কিন্তু সরাসরি বলেছে, যদি চায়না ডোকলাম থেকে ম্যুভ করে দক্ষিণে তখন কি আমরা বাংলাদেশের অংশটুকু দখল করে নিবো নাকি চায়না ম্যুভ করার আগেই রংপুরের নিয়ন্ত্রণ নিবে।
‘‘এটা কিন্তু বিজেপি সরকার ও আরএসএসের ঘোষিত নীতি। আরএসএস যেহেতু অখণ্ড ভারতে বিশ্বাস করে। তাই তারা বাংলাদেশকেই বেছে নিয়েছে। পাকিস্তানকে অখণ্ড ভারতের ধারণায় আনার আগে বাংলাদেশকে আগামী কয়েকবছরের মধ্যে অখণ্ড ভারতের অংশ ধরে নেয়া- এটা তারা চেয়েছে’’ বলেন এম শাহিদুজ্জামান।