লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কী এই গোলাপি গুঁড়া?

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিপজ্জনক ঝোড়ো বাতাসের গতি বাড়ার সতর্কতা জারি করেছেন। ফলে প্রাণঘাতী এই দাবানল নিয়ন্ত্রণের তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না; বরং তা আরো ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে দাবানলে অন্তত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলে পুড়ে যাওয়া লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলিতে ছড়িয়ে রয়েছে উজ্জ্বল লাল এবং গোলাপি গুঁড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সংবাদমাধ্যমের ছবিতেও তা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিমান ট্যাংকারগুলো এই উজ্জ্বল লাল এবং গোলাপি রঙের পাউডার বা গুঁড়া ছড়িয়ে দিচ্ছে। চোখ ধাঁধানো এই পদার্থ (অগ্নি প্রতিরোধক) এখন ওই এলাকায় একটি সাধারণ দৃশ্য। বাড়ির ড্রাইভওয়ে, ছাদ এবং গাড়িগুলো ঢেকে গেছে গোলাপি রঙে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পদার্থটি আগুন ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার জন্য গত সপ্তাহে হাজার হাজার গ্যালন পরিমাণ ফেলা হয়েছে। কিন্তু এতে ঠিক কী আছে এবং এটি কীভাবে দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে?

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অগ্নি প্রতিরোধক পদার্থটির নাম ‘ফোস-চেক’, যা পেরিমিটার নামক একটি কম্পানি বিক্রি করে থাকে। ১৯৬৩ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাবানল মোকাবেলায় এটি ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়া এটি ক্যালিফোর্নিয়া বন ও অগ্নি সুরক্ষা বিভাগ কর্তৃক ব্যবহৃত প্রধান দীর্ঘমেয়াদি অগ্নিপ্রতিরোধক।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ২০২২ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এই অগ্নিপ্রতিরোধক বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত অগ্নিপ্রতিরোধকও।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের ওপর এবং ড্রাইভওয়েতে গোলাপি পাউডারের মতো পদার্থের ছবি দেখা গেছে।

ফোস-চেকের পেছনে থাকা কম্পানি পেরিমিটার অতীতে নিরাপদে এই পাউডার ব্যবহারের পর পরিষ্কার করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, ‘প্রতিরোধকটি যত বেশি সময় রাখা হবে তত বেশি শুকিয়ে যাবে, তখন সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা তত বেশি কঠিন হবে।’ ছোট স্থানে এই পাউডার অপসারণের জন্য উষ্ণ পানি এবং হালকা ডিটারজেন্ট কার্যকর বলে কম্পানিটি জানিয়েছে।

তবে বড় স্থানের জন্য প্রেসার ওয়াশার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফোস-চেকের সঠিক সূত্রটি জনসাধারণের জানা নেই, তবে কম্পানিটি আগে জানিয়েছিল, পণ্যটিতে ৮০ শতাংশ পানি, ১৪ শতাংশ সার-জাতীয় লবণ, ৬ শতাংশ রঙিন উপাদান এবং ক্ষয় প্রতিরোধক রয়েছে। এতে রং ব্যবহার করা হয় মূলত দৃশ্যমান্যতার জন্য, যাতে পাইলট এবং অগ্নিনির্বাপক উভয়ের জন্য এটি ছড়িয়ে দিতে সুবিধা হয়। সূর্যালোকের সংস্পর্শে কয়েক দিন থাকার পর এই রং মাটির রঙে মিশে যায় বলে কম্পানিটি জানিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছপালা এবং জমিতে সাধারণত এই প্রতিরোধক স্প্রে করা হয়, যাতে আগুন সেই এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে।

মার্কিন বন পরিষেবা অনুসারে, অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা কমিয়ে দেয়, প্রতিরোধকের অজৈব লবণ এ ক্ষেত্রে কাজ করে। তবে পরিবেশের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিতর্ক হয়েছে অতীতে। এর আগে, সংস্থাটির বিরুদ্ধে বিমান থেকে বনে রাসায়নিক এই অগ্নিপ্রতিরোধক ফেলে, দেশের পরিষ্কার পানিদূষণের আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

২০২২ সালে মার্কিন বন পরিষেবার বর্তমান এবং সাবেক কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংস্থা ফরেস্ট সার্ভিস এমপ্লয়িজ ফর এনভায়রনমেন্টাল এথিক্স কর্তৃক এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তাদের যুক্তি, রাসায়নিকটি পানিতে থাকা মাছ মেরে ফেলে।

কিন্তু এরপর একজন মার্কিন জেলা বিচারক কর্মচারীদের সঙ্গে একমত হলেও তার রায়ে এই প্রতিষেধক ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। কারণ বন পরিষেবাকে মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার (ইপিএ) কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিল সংস্থাটি।

এই মামলাটি অতীতে দাবানলে বিধ্বস্ত সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। যার মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার প্যারাডাইস শহরও ছিল। শহরটি ২০১৮ সালে আগুনে ধ্বংস হয়ে যায়। তখন তৎকালীন মেয়র গ্রেগ বলিন বিচারকের এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এই পণ্যটি দাবানলের মুখে চলে আসা সম্প্রদায়কে লড়াইয়ের সুযোগ দেয়।’

তবে এই বছর তারা অন্য ধরনের উপদান ব্যবহার করছে, যা বন্য প্রাণীর জন্য কম বিষাক্ত। দেশটির বন পরিষেবা সংবেদনশীল পরিবেশগত এলাকায় যেমন জলপথ এবং বিপন্ন প্রজাতির আবাসস্থলে এই অগ্নিপ্রতিরোধক ফেলার ওপর বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। তবে যদি মানুষের জীবন বা জননিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়, সেই ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞার ব্যতিক্রম হতে পারে।

সূত্র : বিবিসি