গেল ৬ জানুয়ারি, প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের লাইভ টকশোতে কথা বলেছেন দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম (বীর উত্তম)। মেজর ডালিম শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত। লাইভে ৫০ বছরের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।
এবার ডালিম পত্নী নিম্মিকে নিয়ে নিজেই মুখ খুলেছেন।জবাব দিলেন অনেক বিতর্কিত প্রশ্নের। স্ত্রীকে অপহরণের বিষয়ে মেজর ডালিম বলেন , ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে মেজর ডালিমের খালাতো বোন তাহ্মিনার বিয়ে ঠিক হয় কর্নেল রেজার সঙ্গে। এই বিয়ের পুরো আয়োজন এবং মধ্যস্থতা করছিলেন মেজর ডালিম এবং তার স্ত্রী নিম্মী। বিয়ের অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা লেডিস ক্লাবে, যা সে সময় ধনী ও প্রভাবশালীদের একটি আভিজাত্যপূর্ণ ক্লাব হিসেবে পরিচিত ছিল।
বিয়ের দিন মেজর ডালিমের শ্যালক বাপ্পি, যিনি আমেরিকা থেকে এসেছিলেন, তার সঙ্গে রেডক্রসের চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফার দুই ছেলের কথাকাটাকাটি হয়। এই দুই ছেলে শেখ কামালের বন্ধু ছিলেন। কথাকাটাকাটির কিছুক্ষণ পর দুটি মাইক্রোবাস এবং একটি কার লেডিস ক্লাবে প্রবেশ করে।
কার থেকে নামেন গাজী গোলাম মোস্তফা।মাইক্রোবাস থেকে প্রায় ১০-১২ জন অস্ত্রধারী বেসামরিক ব্যক্তি বেরিয়ে আসেন।তারা প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা আলম এবং চুল্লুকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেন।চুল্লুকে অস্ত্রের বাঁট দিয়ে আঘাত করা হয়, যার ফলে তার মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হয়।এরপর তারা মেজর ডালিমকেও জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেন।
মেজর ডালিম আরো বলেন,তাঁর স্ত্রী নিম্মী তাঁকে একা যেতে দিতে রাজি হননি, তাই তিনিও মাইক্রোবাসে ওঠেন।তাদের সঙ্গে মেজর ডালিমের খালামনিও ছিলেন।অপহরণের পর তাদের সবাইকে বঙ্গবন্ধু ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।
দ্বিতীয়ত, ৭৫’ এর ১৫ই আগস্টে ঠিক কি হয়েছিল জানতে চাইলে মেজর ডালিম বলেন, খুবই স্পর্শকাতর প্রশ্ন। নিজের বাদ্য নিজে বাজানো যায় না। প্রথম কথা, ১৫ই আগস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটার সূত্রপাত হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায়। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা কাদের ইন্টারেস্টে হচ্ছে? এটা কি আমাদের ইন্টারেস্টের জন্য হচ্ছে যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করবো। নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করবো।Travel packages
তিনি আরো বলেন, যখন সাত দফাতে চুক্তি করে নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিনকে পারমিশন দেওয়া হলো একটা প্রভিশনাল গর্ভমেন্ট গঠন করার। সাতটা ক্লজ পড়ে সাইন করার পর নজরুল ইসলাম ফিট হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন যে, আমরা ক্রমান্বয়ে ভারতের একটা করদরাজ্য-অঙ্গরাজ্যে পরিণত হব।
তিনি বলেন, শেখ মুজিব তার জুলুমের মাত্রা এতোটাই তীব্র করেছিল স্বৈরাচারী আচরণের মতো যে, তখন মানুষ রবের কাছে মুক্তি চাচ্ছিল তার জুলুমের অবসানের জন্য।
মেজর ডালিম আরো বলেন, ‘মুজিব তো মারা যায়নি, মুজিব একটি সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছেন। সেনা অভ্যুত্থান তো আর খালি হাতে মার্বেল খেলা না। ওখানে দুই পক্ষ থেকেই গোলাগুলি হয় এবং হতাহত হয় দুইপক্ষেই। যেমন মুজিবের পক্ষের কিছু লোক মারা গেল সেভাবে সেনা অভ্যুত্থানকারী বিপ্লবীদের পক্ষ থেকেও কিছু লোক প্রাণ হারায়। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু বিপ্লবীরা বিজয়ী হয়ে গেল, তারা ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিলো।
মুজিবের মৃত্যুর খবর জানার পর আর বাকশালের পতনের খবর জানার পর শহর বন্দর গ্রামের লাখ লাখ মানুষ আনন্দ মিছিল বের করলো। যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতা বা দলগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড ছিল তারাও জনসমর্থন নিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এভাবেই জনস্বীকৃতি পেয়েছিল ১৫ আগস্টের বৈপ্লবিক সামরিক অভ্যুত্থান।
তবে ঐতিহাসিক তথ্য নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও, গেল ৬ জানুয়ারির মেজর ডালিমের সাক্ষাৎকার অনুসারে শেখ মুজিব হত্যাকান্ডে ৭১’য়ের ঘটনার প্রেক্ষিতেই শেখ মুজিব হত্যাকান্ড হয়েছিল, দাবি মেজর ডালিমের।মেজর ডালিমের বক্তব্যনুসারে, নিম্মিকান্ডে শেখ মুজিবকে হত্যার যে বিষয় বিতর্কে ছিল এতদিন, মেজর ডালিম তাঁর অনেকটাই খোলাসা করায় এটা বলা যা,শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের সাথে ডালিম পত্নীর ঘটনার সম্পৃক্ততা নেই।
উল্লেখ্য সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের, আমাদের সবার প্রিয় নিম্নী ভাবি কেমন আছে? প্রশ্নের জবাবে মেজর ডালিম বলেন, উনি বেঁচে নেই উনাকে আল্লাহ নিয়ে গেছে এবং উনি মারা গেছেন ২০০৫ সালে।