তাসকিনের আগুন বোলিংয়ে তছনছ দুনিয়া, নাম লেখালেন রেকর্ড বুক

সদ্য গত হওয়া বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল হাতে প্রতিপক্ষকে বেশ ভুগিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। বিশেষ করে ডানহাতি এই পেসার স্বল্প পরিসরের ক্রিকেটে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। গত বছর ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ৬৩ উইকেট শিকার করেছেন তাসকিন। ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ১৪টি, টি২০ ফরম্যাটে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৩০টি (পেসারদের মধ্যে সেরা) উইকেট নিয়েছেন।

সেই ফর্মটা তাকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি২০ আসরে আরও যেন দুর্বার, দুরন্ত করে তুলেছে। বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিধ্বংসী এই পেসার রেকর্ড বুক ওলট-পালট করে দিয়েছেন। এদিন দুর্বার রাজশাহীর হয়ে ঢাকা ক্যাপিটালের বিপক্ষে এই পেসার ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৭ উইকেট শিকার করে বিপিএল ইতিহাসের সেরা বোলিংয়ের নজির স্থাপন করেছেন। বিশে^র স্বীকৃত টি২০ ক্রিকেট (আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া) ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বিশে^র দ্বিতীয় পেসার হিসেবে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তাসকিন। স্বীকৃত টি২০তে এটা কোনো বাংলাদেশীর সেরা বোলিং। এখন বিপিএলে ১১২ উইকেট নিয়ে তাসকিন দ্বিতীয় স্থানে।
প্রথম ম্যাচে দুর্বার রাজশাহী ৪ উইকেটে হেরে যায় ফরচুন বরিশালের কাছে। তবে তাসকিন ঠিকই বল হাতে ভালো করেছেন। ৩১ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন। এটি তার সদ্য সমাপ্ত বছরে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা উইকেটশিকারি হওয়ারই প্রমাণ। গত বছর তিনি বাংলাদেশের জার্সিতে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৩০ উইকেট নিয়েছেন টি২০তে যা দেশের পক্ষে পেসারদের মধ্যে সর্বাধিক। বৃহস্পতিবার তিনি আরও দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছেন।

এদিন ঢাকা ক্যাপিটালের ব্যাটাররা প্রথম থেকেই ভুগেছেন তাসকিনের পেসে। ৩ স্পেলে বোলিং করেছেন তিনি। পাওয়ার প্লে’র মধ্যে ২ ওভার বোলিং করে ৮টিই ডট দিয়েছেন, ১৪ রান খরচায় শিকার করেন জাতীয় দলের দুই ওপেনার লিটন দাস (০) ও তানজিদ হাসান তামিমকে (৯)। তাসকিনের এই শুরুর ধাক্কায় ঢাকা ক্যাপিটাল ১৪ রানেই ২ উইকেট হারায়। ১৭তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে তাসকিন আবার বোলিংয়ে এসে জোড়া আঘাত হানেন। এবার সাজঘরে ফেরেন হাফ সেঞ্চুরিয়ান শাহাদাত হোসেন দিপু (৪১ বলে ৫০) ও চতুরঙ্গ ডি সিলভা (১)। এবার মাত্র ৩ রান দিয়েছেন তিনি।

শেষ ওভারে নিজের শেষ ওভারটি করতে এসে আগুন ঝরিয়েছেন তাসকিন। মাত্র ২ রান দিয়ে শিকার করেন ৩ উইকেট। তার শিকার হন আলাউদ্দিন বাবু (১৩), মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ (০) ও শুভম রনজনে (২৪)। সবমিলিয়ে ৪ ওভারে ১৫টি ডট বল করে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৭ উইকেট শিকার করেন তাসকিন। যে কোনো পর্যায়ের স্বীকৃত ক্রিকেটে এটাই তাসকিনের সেরা বোলিং নৈপুণ্য। তার এই আগুন বোলিংয়ে রেকর্ড বুক পুড়ে গিয়ে নতুনভাবে লিখিত হয়েছে।
বিপিএলে সর্বাধিক ৫ বার ইনিংসে ৪টির বেশি এবং থিসারা পেরেরার পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসে দুইবার ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ডও গড়েছেন তাসকিন। চলতি আসরে মাত্র ২ ম্যাচ খেলেই ১০ উইকেট নিয়ে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছেন তাসকিন। সবমিলিয়ে বিপিএলে ৮০ ম্যাচ খেলে ১১২ উইকেট এখন তার। পেসারদের মধ্যে সবার ওপরে তিনি। রুবেল হোসেন ৮৮ ম্যাচে ১১০ উইকেট নিয়ে তার পেছনে চলে গেছেন। তাসকিনের ওপরে আছেন শুধু বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান ১৪৯ উইকেট নিয়ে।

বাংলাদেশের আর কোনো বোলার আন্তর্জাতিক, ফ্র্যাঞ্চাইজি কিংবা ঘরোয়া আয়োজন মিলিয়ে স্বীকৃত টি২০তে ৭ উইকেট নিতে পারেননি। এতদিন টি২০তে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ছিল সাকিবের দখলে। তিনি ২০১৩ সালের ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ব্রিজটানে বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টসের হয়ে ৬ রানে ৬ উইকেট নেন ত্রিনিদাদের বিপক্ষে। সেটাই ছিল বাংলাদেশের সেরা টি২০ বোলিং। এবার তাকে শুধু ছাড়িয়েই গেলেন না, বিশে^র তৃতীয় বোলার হিসেবে টি২০তে ৭ উইকেট শিকারের নজির গড়লেন তাসকিন।

মালয়েশিয়ার পেসার সায়াজরুল ইদরুস ২০২৩ সালে কুয়ালালামপুরে চীনের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি২০তে ৪ ওভারে ১ মেডেনে ৮ রানে ৭টি এবং ইংল্যান্ডের ভিটালিটি ব্লাস্ট টি২০ আসরে লিস্টারশায়ারের হয়ে বার্মিংহ্যাম বিয়ার্সের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের অফস্পিনার কলিন অ্যাকারম্যান ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৭ উইকেট নেন। সার্বিকভাবে তাই তৃতীয় সেরা বোলিং তাসকিনের।

কিন্তু বিশে^র দ্বিতীয় পেসার হিসেবে ৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বিপিএলে এর আগে সেরা বোলিং ছিল পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমিরের। তিনি ২০২০ সালের বিপিএলে রাজশাহী রয়্যালসের হয়ে মিরপুরেই খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ৪ ওভারে ১৭ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। এবার তাকেও পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়লেন তাসকিন।