হৃদয়বিদারকঃ অভ্যুত্থানে বাবার মৃত্যু, ৫ মাস পর ছেলের জন্ম

ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দিলেন ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ভোলার দৌলতখানের সৈয়দপুর ইউনিয়নের মো. শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ভোলা শহরের এশিয়া মেডিকেল সেন্টারে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে তিনি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।

নবজাতকের আগমনে শহীদ পরিবারে আনন্দের পরিবর্তে এখন বিষাদের ছায়া। কারণ শহীদ শাহজাহান মৃত্যুর আগে ছেলের নাম রেখে গেলেও নিজ চোখে দেখে যেতে পারেননি।

তার স্ত্রী চার মাসের অন্তঃসত্বা থাকাকালীন ছেলের নাম মো. ওমর ফারুক রাখবেন বলে ঠিক করেছিলেন শাহজাহান।

এদিকে, শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ছেলে সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবরে শনিবার সকাল ১১টার দিকে হাসপাতালে ছুটে যান ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান।

এ সময় তিনি শাহজাহানের স্ত্রী ও সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং নবজাতকের জন্য নতুন পোশাক, কম্বল, ফলের ঝুড়ি, মিষ্টি ও নগদ ১০ হাজার টাকা উপহার দেন। এ ছাড়াও হাসপাতালের চিকিৎসার সকল খরচ দেওয়ার পাশাপাশি শিশুটির পাশে থাকার কথাও জানান তিনি।

ভোলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাহিম ইসলাম ও কামরুন নাহার এনি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, শিশুর জন্মের পর মা ফাতেমা বেগমের মুখে হাসি ফুটলেও সন্তানের বাবার কথা বলে কেঁদে ফেলেন তিনি। বাবার আদর্শে সন্তানকে বড় করার স্বপ্ন তার।

ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ছোটধলী গ্রামের মো. শাজাহান ঢাকায় পাপস বিক্রি করতেন।

গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গুলিতে শহীদ হন তিনি। তখন তার স্ত্রীর গর্ভে ৪ মাসের অনাগত সন্তান।
শাজাহানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘শাজাহানের স্বপ্ন ছিল ছেলে বা মেয়ে যা হোক না কেন তাকে মাদরাসায় পড়ালেখা করাবেন। নামটিও রেখে গেছেন খলিফা হয়রত ওমরের (রা.) নাম অনুসারে। আজ সন্তান জন্ম নিল, কিন্তু ছেলের মুখ দেখে যেতে পারলেন না, কোলে নিতেও পারলেন না।


উল্লেখ্য, শহীদ শাহজাহান ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে পাপস বিক্রি করতেন। ঢাকার কামরাঙ্গিরচর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত ১৬ জুলাই সকালে বাসা থেকে দোকানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। বিকেল ৩টার দিকে তার মোবাইল থেকে এক অপরিচিত লোক স্ত্রী ফাতেমাকে ফোন করে জানান, তার স্বামী শাহজাহান আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে আছেন। এ খবর পেয়ে তিনি দ্রুত বাসা থেকে ঢাকা মেডিক্যালে যান।

সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে নাকের ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান।

এ খবর জানার পর স্ত্রী ফাতেমা স্বামীর লাশ দেখতে চাইলে সেখানে থাকা পুলিশ তাকে প্রথমে লাশ দেখতে দেয়নি। এক পর্যায়ে অনেক কান্নাকাটি ও অনুরোধের পর কোনোমতে মর্গের দরজা খুলে এক নজর দেখতে দেয়। স্বামীর রক্তাক্ত মরদেহ দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে জানতে পারেন, তার স্বামীকে পুলিশ আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করেছে।