ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অবস্থানকৃত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দেওয়া বাংলাদেশের চিঠি (নোট ভারবাল) গ্রহণ করেছে দিল্লি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সোমবার রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ তথ্য জানিয়েছেন বলে দেশটির ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে এরই মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করছি যে একটি প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিষয়ে আজ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে একটি ‘নোট ভারবাল’ পেয়েছি। তবে এই মুহূর্তে এ বিষয় নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
নোট ভারবাল হলো একটি স্বাক্ষরবিহীন কূটনৈতিক বার্তা, যা তৃতীয় ব্যক্তির পক্ষ থেকে পাঠানো হয়ে থাকে।
এর আগে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারত সরকারকে একটি ‘নোট ভারবাল’ (আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক চিঠি) পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় পড়বে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। ঐ চুক্তি অনুযায়ী হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের দফতরে আসেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেই সময় শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ড, গত ১৬ বছরে গুম-ক্রসফায়ার, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড— মোটাদাগে এ কয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এসেছে। শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভা, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান।
জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। এরপর থেকে তাকে দেশে ফেরাতে শুরু হয় নানা আইনি পদক্ষেপ। গত ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে আবেদন করে প্রসিকিউশন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।