জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেতে অনলাইনে আবেদন করে সশরীরে উপস্থিত হয়ে তুলতে হয় ছবি, পাশাপাশি দিতে হয় দশ আঙুলের ছাপ। তবে সম্প্রতি সময়ে প্রবাসে বসে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের এনআইডি তৈরি করেছেন কয়েকজন প্রবাসী। এক্ষেত্রে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ছবি তুলতে হয়নি তাদের, দিতে হয়নি কোনো আঙুলের ছাপও। শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দিয়েই হাতে এনআইডি পেয়েছেন তারা। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ছাড়া ভোটার হওয়ার এই ঘটনাকে ‘ভূতের হাতে এনআইডি’ বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডি২৪লাইভকে জানান, সশরীরে উপস্থিত না হলে ছবি বা বায়োমেট্রিক গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় বায়োমেট্রিক ও ছবি উঠানো ছাড়া কোনোভাবেই একজন ব্যক্তি ভোটার হওয়া তো দূরের কথা জাতীয় পরিচয়পত্র তুলতে পারবেন না।
প্রক্সি ছবি ও বায়োমেট্রিক ছাড়া ভোটার হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি এমন কিছু এনআইডি আমাদের হাতে এসেছে। যেখানে আমরা দেখেছি সশরীরে উপস্থিত না হয়ে অন্য কোনোভাবে ছবি উঠিয়ে বা অন্যের বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে ভোটার হয়েছে। যারা সবাই ভোটার হওয়ার সময়ে বিদেশে ছিলেন। কিন্তু তারা দেশে না এসে, ছবি না তুলে, বায়োমেট্রিক না দিয়ে কীভাবে ভোটার হয়ে গেলেন তা এক ভূতুড়ে কারবার। এখন তো আমার কাছে মনে হচ্ছে, এনআইডি ভূতের হাতে আছে! ইচ্ছে হলে যে কাউকে ভোটার বানিয়ে দিচ্ছে, কেউ জানতেও পারছে না।
তবে ইসির এই কর্মকর্তা জানালেন, যারা জালিয়াতি করে এনআইডি তুলেছে, তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, অপরাধী যতই চালাক হোক না কেন, সে ধরা পড়বেই। ইতোমধ্যেই যারা জালিয়াতি করে ভোটার হয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তদন্তও চলমান রয়েছে। এসব জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
বিডি২৪লাইভের অনুসন্ধানে রাকিবুল শেখ নামের এক ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি ফ্যাক্ট চেকিংয়ে দেখা যায়, ছবিটি মোবাইলের সেলফি ক্যামেরা কিংবা প্রিন্ট করা ছবি থেকে নেওয়া হয়েছে। শফিকুল ইসলাম ও সিহাব মিয়া নামের দু’জন ব্যক্তির এনআইডিতেও একইভাবে ছবির ব্যবহার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, রাকিবুল শেখ নামের এক যুবক এনআইডি নিবন্ধনের সময় যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছে সেটা রাজু নামের এক ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত। ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে বিডি২৪লাইভকে রাজু বলেন, রাকিবুল শেখ নামের কোনো ব্যক্তিকে আমি চিনি না। আমার ফোন নম্বর ব্যবহার করে যে কেউ ভোটার হয়েছে, সেটাও জানা নেই। আপনার কাছ থেকেই জানলাম।
একই ঘটনা দেখা গেছে শফিকুল ইসলামের এনআইডিতেও। জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য তিনি যে নম্বরটি ব্যবহার করেছেন সেটাও তার নিজের নয়। ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে শফিক নামের এক যুবক বিডি২৪লাইভকে জানান, শফিকুল তার পরিচিত ছোট ভাই। এজন্য ভোটার নিবন্ধনের সময় তার নম্বরটি দিয়েছিলেন।
বিদেশে থাকা অবস্থায় শফিকুল ইসলাম কীভাবে ছবি উঠালেন ও আঙুলের ছাপ দিলেন, জানতে চাইলে বক্তব্য পরিবর্তন করে ওই যুবক বলেন— আমি এসব কিছু জানি না। আমার এক বন্ধু নম্বরটা দিতে বলেছিল। সেজন্য দিয়েছিলাম। এর বাইরে কিছু জানা নেই।
এছাড়া সিহাব মিয়া নামের আরও এক প্রবাসীর এনআইডিতে যে নম্বর পাওয়া গেছে সেটি মামুন মুন্সির নামে নিবন্ধিত। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আমার বন্ধু নম্বরটা নিয়েছিল। তবে সেই নম্বর ব্যবহার করে কারো ভোটার নিবন্ধনের আবেদন করা হয়েছে, সেটা জানা ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা জানান, বিদেশে বসে দেশে ছবি ও অন্যের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ভোটার হওয়ার ঘটনা সত্য। তবে এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই তাদের সত্য-মিথ্যা যাচাই করা সম্ভব হয় না।