মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার প্রতি আমাদের ভালোবাসা হবে ভয় এবং আশা মিশ্রিত। আমাদের ঈমান কোন পর্যায়ের তা ভেবে হতাশ হওয়া যাবে না। সর্বদায় আমাদের ঈমান উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আর তাই চলুন জেনে নিই- কীভাবে আমরা আমাদের ঈমানকে বৃদ্ধি ও সুদৃঢ় করতে পারি, আর কীভাবে আমরা আমাদের ঈমানের উন্নয়ন করতে পারি?
ঈমান বৃদ্ধি, সুদৃঢ় ও উন্নয়নের উপায়
(১) অর্থ বুঝে কোরআন তেলাওয়াত করুন। তেলাওয়াত করার সময় প্রতিটি আয়াতের মর্মার্থ উপলব্ধি করে সেগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করুন। দেখবেন হৃদয়ে আপনি এক অকৃত্রিম প্রশান্তি বোধ করবেন। হৃদয়ের কোমলতা বাড়বে। কোরআন তেলাওয়াতের সময় মনে মনে কল্পনা করুন আপনি বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে কথা বলছেন। মনের ভেতর এমন ধরনের অনুভুতি সৃষ্টি করতে পারলে কোরআন তেলাওয়াতের সর্বোত্তম সুফল অর্জন করা সম্ভব হবে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন ধরনের মানুষের কথা বলেছেন। নিজেকে মিলিয়ে দেখুন আপনি কোন শ্রেণির মানুষ।
(২) আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহত্ত্বকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। বিশ্বচরাচরে যা কিছু আছে সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণাধীন। আমরা চোখ খুলে যা কিছু দেখি সমস্ত কিছুর মাঝেই রয়েছে তার নিদর্শন যা প্রতিনিয়ত তারই মহীমা ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে চলেছে; তার হুকুম ছাড়া কোনো কিছুই ঘটে না; তিনি সর্বদ্রষ্টা; কোনো কিছুই তার দৃষ্টি সীমার বাইরে নয়। গহীন অন্ধকার রাতে কালো পাথরের ওপর কালো পিঁপড়াটিও নয়।
(৩) জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করুন। অন্তত প্রত্যাহিক জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গলো সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থাকা লাগবে। যেমন; সঠিক আকিদাহ, তাওহিদ, শিরকসম্পর্কে। সঠিক পদ্ধতিতে উত্তমরূপে নামাজ পড়া ও ওজু করতে জানা। আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামগুলোর অর্থসহ সেগুলোর তাৎপর্য জানুন। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে তারাই বেশী ভয় করতে পারে যারা জ্ঞানী, যারা তার সম্পর্কে জানে।
(৪) দ্বীনের আলোচনা হয় এমন বৈঠকে যোগদিন। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সম্পর্কে আলোচনা হয় এমন অনুষ্ঠানে ফেরেশতারাও সমবেত হয়ে থাকেন।
(৫) বেশী বেশী সৎকর্ম করুন। একটি সৎকর্ম অন্যান্য সৎকর্মসমূহের দুয়ার খুলে দেয়। বেশী বেশী দান সাদাকাহ করুন। এমনটি করলে আল্লাহ তাআলা আপনার জীবনের চলার পথকে সহজ করে দেবেন। ফলে আপনি আরো বেশী সৎকর্ম সম্পাদনের জন্য উৎসাহ বোধ করবেন। সৎকর্ম সম্পাদন আপনার জন্য সহজ হয়ে উঠবে। সৎকর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাঝে মাঝে অনেক ভালো কাজ করার চেয়ে অল্প অল্প করে প্রতিদিন কিছু না কিছু ভাল কাজ করা আল্লাহ তাআলার কাছে বেশী পছন্দনীয়।
(৬) আপনার জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি তথা মৃত্যু হতে পারে অত্যন্ত মর্মান্তিক। কাজেই প্রতিটি মুহূর্তে মৃত্যুকে ভয় করে পৃথিবীতে বেঁচে থাকুন। পার্থিব খেল-তামাশা থেকে বেঁচে থাকার জন্য বেশী বেশী মৃত্যুকে স্মরণ করুন।
(৭) আমাদের পরকালীন জীবনে বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। পরকালীন জীবনের শুরু হয় মৃত্যু দিয়ে। এরপর কবরের জীবন, হাশরের ময়দানে বিচার, বিচার শেষে হয় জান্নাত না হয় জাহান্নাম। এছাড়াও রয়েছে পুলসিরাত। বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন। এমন পরকালীন ভাবনা আপনার ইহকালীন জীবনকে পরিশুদ্ধতা দান করবে। ফলে আপনার ঈমান সুদৃঢ় হবে।
(৮) প্রতিনিয়তই রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার সাহায্য প্রার্থনা করুন। বোঝার চেষ্টা করুন আমাদের অস্তিত্বের জন্য, আমাদের স্বার্থেই আল্লাহ তাআলাকে আমাদের প্রয়োজন। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা থেকে বিরত থাকুন। বিনয়ী জীবন যাপন করুন। জড়বাদী এই পৃথিবীর মোহে অন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে বেঁচে থাকুন।
(৯) রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার দেয়া জীবন বিধান পালনের মাধ্যমে প্রমান করুন আপনি আপনার স্রষ্টাকে ভালোবাসেন। তার কাছে প্রার্থনার ক্ষেত্রে সর্বদায় আশাবাদী হউন। আশা করুন, আপনি যা চান তিনি তাই কবুল করবেন। তবে যে কোনো সময় অপরাধ বা ভুল হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে সদা সতর্ক ও ভীত থাকতে হবে। আত্ম-সমালোচনা করুন। সারাদিন কী করলেন তা পর্যালোচনা করে রাতে ঘুমানোর আগে কিছু সময় ব্যয় করুন।
(১০) উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন, আল্লাহ তাআলার বিধান অমান্য করে আমারা যে পাপ করি তার পরিণতি কী। আমাদের মন্দকর্মগুলো ঈমানকে দুর্বল করে দেয়। পক্ষান্তরে, সৎকর্মসমূহ আমাদের ঈমানকে সুদৃঢ় করে তোলে। এই বিশ্ব চরাচরে কোনো কিছুই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ছাড়া সংঘটিত হয় না। আর আমাদের ওপর যে বিপদ-আপদ আসে তা আমাদের নিজের হাতের কামাই ছাড়া কিছুই নয়। আমরা তার অবাধ্য হয়ে নানান পাপে লিপ্ত হই যে পাপ আমাদের সব দুর্দশার কারণ।
ইয়া আল্লাহ্! আমাদের সবার ঈমান বৃদ্ধি, সুদৃঢ় ও উন্নয়ন করে দিন এবং আমাদেরকে আপনার মনোনীত একমাত্র দ্বীন ইসলামকে মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।