মুখ খুললেন ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের অ্যাডমিন তুষ্টি

আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এমন কিছু তারকাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ম্যাসেজ ফাঁস হয়েছিল কয়েকদিন আগে। সেখানে ছিলেন ফেরদৌস, রিয়াজ থেকে শুরু করে অরুণা বিশ্বাসের মতো তারকারা। এছাড়া ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী আলি আরাফাতের মতো ব্যক্তি। সেখানে আন্দোলনকারীদের ওপর অরুণা বিশ্বাসের গরম জল ঢালা ফর্মুলা নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। যদিও পরে তিনি নিজের বক্তব্য ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। এবার মুখ খুললেন এই গ্রুপের একজন তারকা অ্যাডমিন শামীমা তুষ্টি।

শনিবার (৭ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তুষ্টি লিখেন, আমি এই মুহূর্তে যা লিখতে যাচ্ছি, আমি জানি, তার জন্য আমি গালি ও ট্রলের সম্মুখীন হতে পারি। তবুও আমি আমার পজিশন ক্লিয়ার করতে চাই। আমি প্রথমেই বলে নিতে চাই যে, আমি একটা রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। এর কারণ আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৬৫ সালে বাবা মালিবাগ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, তাই আমার বাড়িতে সবসময় এই পরিবেশই ছিল যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আমি আমার নিজের পক্ষ ভেবেছি। আমার এই পক্ষপাতিত্ব যে ভুল তাও আমি মনে করি না। আমি মনে করি, আমি আমার অংশগ্রহণ ঠিক বিবেচনা করেই করেছি। কিন্তু এই দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও আমার নিজের কিছু বিচার-বিবেচনা আছে। আপনারা সকলেই জানেন কেউ কোনো দলের কর্মী হিসাবে কাজ করে, তখন তার সেই দলের নেতাদের কথামতো কাজ করতে হয়। সেসব দলীয় নির্দেশনার বিপক্ষে গিয়ে কাজ করার পরিস্থিতি থাকে না। এবং আমি তা করতেও চাই না দলের কর্মী হিসাবে।

তিনি আরও লিখেছেন, তাই বলে এই হত্যাকাণ্ড, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই নৃশংসতার আমি সমর্থক নই। এক মিনিটের জন্যও ছিলাম না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে বহু কর্মীই তা ছিলেন না। আমাদের অনেকেরই পজিশন নেওয়া দরকার ছিল। অনেক আগেই দরকার ছিল। আমি জানি, আপনাদের অনেকে এই কথাতেও ক্ষুব্ধ হবেন। কিন্তু আশা করি, এটা মানবেন যে, আমরা বাংলাদেশে কী ঘটছে তাও জানতে দেরি করেছি। দলীয় রাজনীতির মধ্যেও খবর ফিল্টার হয়। যার সন্তান গেছে তার অবস্থা ভেবেছি। প্রতি মুহূর্তে আমি, আমাদের কেউ কেউ, একটা পজিশন নিতে গেছি। সেসব পজিশন কারো না কারো কারণে অন্য আরেকটা পজিশন হয়ে গেছে। আমরা বিটিভিতে গেছি, শিল্পীরা সহিংসতা ও ছাত্রদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে, করেছেনও, তবে সেটা সংবাদে তেমন করে আসেনি। কিন্তু যা এসেছে তাতে আরও ভুল বোঝার জায়গা তৈরি হয়েছে। তবে যা দেখা গেছে সেটাও ঠিক না তা আমি বলব না। আমরা হাসপাতালেও আহতদের দেখতে গেছি। আর তখনো আমি সকল কিছু বুঝে উঠতে পেরেছি তেমন না।

পক্ষ বদলের চেষ্টা করছেন না এমন দাবি করে এই অভিনেত্রী বলেন, আমরা যে যাই ভাবি না কেন, দল মূলত কী কী করতে যাচ্ছে বা কী করবে, তা সম্পূর্ণ জানার উপায় আমাদের ছিল না। আমি এসব কথা বলে পক্ষ বদলের চেষ্টা করছি না। বরং আমার দলের পক্ষে যেসব মারাত্মক ভুল ছিল আমার যেসব বোঝাবুঝি ছিল সেগুলোর কারণে আমার দোনোমনা আর পরিস্থিতির কথা আপনাদের জানাতে এসেছি। আমি একটা সংগঠন করি, যেখানে সিংহভাগই এই হিংস্রতা, এই হত্যার সমর্থক নয়। কিন্তু আমাদের কোনো একটা পজিশন কীভাবে নিতে পারি তা ভাবতে ভাবতেই প্রতিদিন আরও নতুন মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন আরও বেশি করে আপনাদের থেকে দূরে সরে গেছি।

তুষ্টি বলেন, আমি একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছিলাম। সেখানেও আমি বলেছি যে, সকলের সঙ্গে গিয়ে আলাপ করতে হবে। এগুলো বন্ধ করা দরকার। কিন্তু ঘটনা এত দ্রুত ঘটছিল আমি যা সমর্থন করি না তা আপনাদের জানানোর সুযোগ পাইনি। তাছাড়া আমার অনেক সহকর্মীরাও এসবের ভিতরে ছিলেন, পরে হয়ত থাকেননি। তারাও আমাকে অনেক গালাগাল করেছেন। তবু আমি বলতে চাই যে, আমি আমার সহকর্মীদের জন্য অনেক কিছুই করার চেষ্টা করেছি। এখনো তাই করব। এছাড়াও আমরা আমাদের সিনিয়র সহকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পরিনি এক সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য। সেসবও আমাকে ভাবিয়েছে।

দলীয় সকল কর্মকাণ্ড অভিনেত্রী সমর্থন করেন না দাবি করে লিখেছেন, এখনও আপনাদের সামনে এসে কথা বলতে দেরি করেছি। যে ঘৃণার সম্মুখীন আমরা, যে গালাগালি আমি খেতে পারি সেসবের ভয়েই আরও আরও দেরি করে ফেলেছি। কিন্তু আমি নিজেকে বুঝিয়েছি, এসব সমালোচনা আর গালি আর ট্রল আমার গ্রহণ করতে হবে। আর সেসবের মধ্য দিয়েই শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। আপনারা দয়া করে ভুল বুঝবেন না। আমি দল বদলের ইচ্ছা থেকে আসিনি। আমি যে দলে ছিলাম সেই দলের নেতৃবৃন্দের সকল কার্যক্রম যে আমি সমর্থন করি না সেটা জানাতে এসেছি। আমি জানাতে এসেছি, আমি দল করলেও নিজের বিচারবুদ্ধি বিবেক-বিবেচনা বিক্রি দিয়ে আমি দল করি না।

ট্রল ও গালির ভয়ে এতদিন মুখ খুলেননি বলেও জানান অভিনেত্রী। শামীমা তুষ্টি লিখেছেন, আমি অনেক দেরিতে আপনাদের সামনে এসেছি। কিন্তু আমার অনুভূতি নতুন নয়। শুরু থেকেই হচ্ছিল। আমি সত্যি সত্যি ট্রল-গালির ভয়েই আমি আগে লিখিনি। অনেক ট্রল আর গালি নেওয়ার মতো মানসিক অবস্থায় ছিলাম না। এখন কিছুটা কিছুটা নিজেকে সংযত করতে পেরেছি। সহ্য করার মত ধৈর্য আশা করি আমার হবে, আপনাদের সকল কথা নেওয়ার।

সবশেষে তিনি লিখেছেন, সে রকম জায়গা থেকেই আমার অবস্থান আমি আপনাদের কাছে পরিষ্কার করলাম। আমি সকলের মঙ্গল কামনা করছি। শহীদদের আত্মত্যাগ যেন বাংলাদেশে বিফলে না যায়, সেই প্রত্যাশা করছি।