ব্যালন দ’রের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছে ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’। অথচ সেখানে নেই লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর নাম! ব্যাপারটা বর্তমান জেনারেশনের কাছে অবাক করার মতোই। গত ১৬ বছরের মধ্যে যে ১৩ বারই পুরস্কারটি গেছে এই দুজনের দখলে!
বর্ষসেরা ফুটবলারের এই পুরস্কার জয়ের লড়াইয়ে অনুমিতভাবে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিউস জুনিয়র, জুড বেলিংহ্যাম ও ম্যানচেস্টার সিটির আর্লিং হলান্ড।
বুধবার রাতে ব্যালন দ’র ২০২৪ এর ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। ২০০৩ সালের পর প্রথমবার ব্যালন দ’রের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নেই মেসি ও রোনালদোর কেউই।
পুরস্কারটি রেকর্ড আটবার জিতেছেন মেসি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচবার জিতেছেন রোনালদো। ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই দুজনের বাইরে কেউ পুরস্কারটি জিততে পারেননি। ২০১৮ সালে জেতেন রিয়াল মাদ্রিদের ক্রোয়াট মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ।
কোভিডের কারণে ২০২০ সালে পুরস্কারটি দেওয়া হয়নি। এর আগে-পরে দুই বছরে আবার জেতেন মেসি। ২০২২ সালে তা ওঠে তখন রিয়ালে থাকা ফরাসি স্ট্রাইকার করিম বেনজেমার হাতে। একই বছরে বিশ্বকাপ জিতে ২০২৩ সালে পুরস্কারটি অষ্টমবারের মতো জেতেন মেসি।
রোনালদো ও মেসি ইউরোপিয়ান ফুটবলের পাঠ চুকিয়েছেন আগেই। সউদী আরবের ক্লাব আল নাসরের হয়ে গত মৌসুমে ৪৫ ম্যাচে ৪৪ গোল করেন ৩৯ বছর বয়সী রোনালদো। তবে গত জুন-জুলাইয়ে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ইউরোয় পর্তুগালের পাঁচ ম্যাচে একবারও জালের দেখা পাননি আন্তর্জাতিক ফুটবলের রেকর্ড স্কোরার। কোয়ার্টার-ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় ২০১৬ আসরের চ্যাম্পিয়নরা।
ইউরোর একই সময়ে আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা জিতলেও, ব্যক্তিগতভাবে আসরে ভালো করতে পারেননি আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মেসি। ফাইনালে অ্যাঙ্কেলে চোট পেয়ে এখনও মাঠের বাইরে আছেন তিনি। ক্লাব ইন্টার মিলানের হয়ে তিনি খুব একটা খারাপ করেননি। তবে ব্যালন দ’রের লড়াইয়ে জায়গা পাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট হয়নি।
এবার পুরস্কারটি জয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রাখা হচ্ছে ভিনিসিউসকে। গত মৌসুমে রিয়ালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে দলের ২-০ ব্যবধানের জয়ে একটিসহ আসরে তিনি করেন ৬ গোল। নির্বাচিত হন আসরের সেরা খেলোয়াড়।
২০২৩-২৪ মৌসুমে লা লিগায় তিনি করেন ১৫ গোল। এছাড়া স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে করেন হ্যাটট্রিক।
গত মৌসুমে প্রথম দল হিসেবে ম্যানচেস্টার সিটির টানা চতুর্থ প্রিমিয়ার লিগ জয়ে বড় অবদান রাখেন হলান্ড। চোটের কারণে লিগের সব ম্যাচ তিনি খেলতে পারেননি। ৩১ ম্যাচ খেলে গোল করেন ২৭টি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গত মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৪৫ ম্যাচে তার গোল ৩৮টি। তার জাতীয় দল নরওয়ে ইউরোর মূল পর্বে উঠতে পারেনি।
গত মৌসুমে রিয়ালে যোগ দিয়েই দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরেন বেলিংহ্যাম। ইংলিশ এই মিডফিল্ডার লা লিগায় ২৮ ম্যাচে ১৯ গোলের সঙ্গে অ্যাসিস্ট করেন ৬টি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচে তার গোল ৪টি, অ্যাসিস্ট ৫টি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪২ ম্যাচে ২৩ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থের ১৩ গোলে অবদান রাখেন তিনি।
আগামী ২৮ অক্টোবর প্যারিসে জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। ব্যালন দ’র জয়ী নির্বাচিত হয় সাংবাদিকদের ভোটে।
ব্যালন দ’রের জন্য ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা: জুড বেলিংহ্যাম (রিয়াল মাদ্রিদ), রুবেন দিয়াস (ম্যানচেস্টার সিটি), ফিল ফোডেন (ম্যানচেস্টার সিটি), ফেদেরিকো ভালভের্দে (রিয়াল মাদ্রিদ), এমিলিয়ানো মার্তিনেস (অ্যাস্টন ভিলা), আর্লিং হলান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি), নিকো উইলিয়ামস (আথলেতিক বিলবাও), গ্রানিত জাকা (বায়ার লেভারকুজেন), আর্তেম দোভিক (জিরোনা/রোমা), টনি ক্রুস (রিয়াল মাদ্রিদ), ভিনিসিউস জুনিয়র (রিয়াল মাদ্রিদ), দানি ওলমো (লাইপজিগ/বার্সেলোনা), ফ্লোরিয়ান ভিরৎজ (বায়ার লেভারকুজেন), মার্টিন ওডেগোর (আর্সেনাল), মাটস হুমেলস (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), রদ্রি (ম্যানচেস্টার সিটি), হ্যারি কেইন (বায়ার্ন মিউনিখ), ডেকলান রাইস (আর্সেনাল), ভিতিনিয়া (পিএসজি), কোল পালমার (ম্যানচেস্টার সিটি/চেলসি), দানি কারভাহাল (রিয়াল মাদ্রিদ), লামিনে ইয়ামাল (বার্সেলোনা), বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল), হাকান কালহানোগলু (ইন্টার মিলান), উইলিয়াম সালিবা (আর্সেনাল), কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি/রিয়াল মাদ্রিদ), লাউতারো মার্তিনেস (ইন্টার মিলান), অ্যাডেমোলা লুকম্যান (আতালান্তা), আন্টোনিও রুডিগার (রিয়াল মাদ্রিদ), আলেক্স গ্রিমাল্দো (বায়ারলেভারকুজেন)।