দীর্ঘদিনের হয়রানির পরিবর্তে মিলেছে স্বস্তি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টেলিফোন সেবা-হেল্পডেস্ক থাকলেও এতদিন তা কাজে আসেনি যাত্রীদের।
এবার সেগুলো চালুর পাশাপাশি মিলছে ফ্রি ওয়াইফাইসহ নানা সুবিধা। লাগেজ কাটা বা চুরি ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে সতর্কতা। দ্রুত লাগেজ ছাড় পেয়ে স্বস্তি জানাচ্ছেন প্রবাসীরা।
স্বৈরাচারিণী হাসিনা সরকারের আমলে অব্যবস্থাপনা-অনিয়মই যেন হয়ে উঠেছিল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিত্যদিনের চিত্র।তবে এবার পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। যাত্রী লাঞ্ছনা,লাগেজ কেটে চুরি, ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমসসহ পদে পদে হয়রানি আর নেই।
সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘদিন পর যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সার্বিক নিরাপত্তায় নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন যাত্রী সেবায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর রাতারাতি এভাবেই পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বদলে গেছে যাত্রী সেবা থেকে শুরু করে কার পার্কিং এলাকার নৈরাজ্য, ভেঙেছে দর্শনার্থীদের টিকেট বিক্রির সিন্ডিকেট ও পাবলিক টয়লেটসহ নাগরিক সকল সেবা।
বিমানবন্দরের বর্তমান হয়রানি মুক্ত সেবা কার্যক্রমের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করে ফেসবুকে অসংখ্য বিমানযাত্রী পোস্ট দিচ্ছেন।
নেটিজেনরা বলছেন, বিমানবন্দরের এমন পরিচ্ছন্ন সেবা আগে কখনো দেখিনি। আমরা কোন ধরনের হয়রানি ছাড়াই সুন্দরভাবে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে নিজেদের লাগেজ বুঝে পেয়েছি। আগে বিমানবন্দরে নানাভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। হয়রানি ও ঘুষমুক্ত সেবা পেয়ে তারা অনেক খুশি।
ফেসবুকে আল আমিন আরাফাত লিখেছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুন্দর এক এয়ারপোর্ট পেলাম ঢাকা এয়ারপোর্ট।এইতো কিছুদিন আগেও এয়ারপোর্টে ট্রলি গোছানোর কাজ করা ছেলেটাও নিজেকে জমিদার ভাবতো। বোডিং ইমিগ্রেশন সবাই কেমন খিটখিটে স্বভাবের ছিলো।মেক্সিমাম ইমিগ্রেশন অফিসাররা নিজেদের কেমন মালিক মালিক ভাবতো,আমাদের চাকরের নজরে দেখতো। দেখি তাকান,কই যান কি জন্য যান,কি করেন,কত বেহুদা প্রশ্ন কইরা যে হয়রানী করতো,এদের স্যার স্যার না বললে,জাত যায় এদের।
আজকের দৃশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন পেলাম।প্রতিটা কর্মচারী সহযোগীতা পূর্ণ আচরণ করছেন।বোডিং ইমিগ্রেশন অফিসাররে পাসপোর্ট দিতেই,সবাই খুব আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন,ভাই বলে সম্মোধন করছেন।
ইমেগ্রেশন অফিসার বললো আলামীন ভাই বাইতুল্লাহ গিয়ে আমাদের দেশের বন্যা-কবলিত মানুষের জন্য দোয়া কইরেন।
কথাটা শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম, কতটা মায়া নিয়ে বললো।
চেক ইন কিংবা বিমানে উঠার সময় অনেক মুরুব্বি ভালোভাবে না বুঝলেন,আংকেল বলে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে। স্বৈরাচার মুক্ত স্বাধীন দেশের সবকিছুই সুন্দর। এই পরিবেশ অব্যাহত থাকুক আজীবন।
এসআর ফাইজুল্লাহ লিখেছেন, একটা জিনিস খেয়াল করেছি, স্বৈরাচার পতনের সাথে সাথে সবাই দেশটাকে নিজের ভাবছে। মানুষ এখন দেশকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। এরকমটা আমি আগে কখনো দেখিনি। এর আগে যেকোনো দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় অল্প কিছু সেলিব্রিটি বা সংস্থা সাহায্য করতে নামতো। এবার অনেকটাই ভিন্ন চিত্র। সারাদেশের সাধারণ মানুষ নেমে গেছে। যার যার জায়গা থেকে যে যা পারছে করছে। এর থেকে সুন্দর কিছু আর বাংলাদেশের জন্য হতে পারত না, ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ হারবে না। সকল প্রতিকুলতা কাটিয়ে অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে ইনশাল্লাহ।
আজগর হোসাইন সুমন লিখেছেন, দেশ সংস্কার তো কোনো আমলা, টিচার, আইনজীবী শিক্ষিতরা, নেতারা করিনি বরং তারা দেশের আইন নষ্ট করেছে,শিক্ষাখাত নষ্ট করেছে, দুর্নীতি করেছে। এখন আপনারা আমরা যখন দেশ সংস্কার করতে পারলাম না,তখনই ছাত্র ছাত্রীরাই নিজেদের জীবন দিয়ে, শরীরের তাজা রক্ত ঢেলে দেশকে মুক্ত করে সংস্কার করছে। তাদের যতটুকু ক্ষমতার মধ্যে আছে ততটুকুই তারা সংস্কার করার চেষ্টা করছে।আমরা সাধারন মানুষ শিক্ষাখাত,ভূমি খাত,চিকিৎসা খাত সহ যাবতীয় সরকারি অফিসে জিম্মির মত আছি, যা চাই তাই দিয়ে দিতে হত।ছাত্রদের যখন তারাই ক্ষেপিয়ে দিয়েছে তখন সংস্কারটাও ছাত্ররাই করুক যতটুকু তারা পারে।
শরিফ হোসাইন লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ আগের চেয়ে অনেক অনেক পরিবর্তন হয়েছে।যেই যেই জায়গাগুলোতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় এবার এয়ারপোর্টে গিয়ে অবাকই হয়েছিলাম কোন ঝামেলা ছাড়াই আসতে পারছি।
আলি আব্বাস লিখেছেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এয়ার পোর্ট মাড়িয়ে দেশ ত্যাগ করতে হবে। চারিদিকে এত প্রশংসা শুনে মনে মনে আনন্দে আছি যে আর হয়তো এয়ারপোর্টে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। দেখি সত্যি এমনটা হয় কি না!