বন্যায় কুমিল্লার ১৪টি উপজেলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব উপজেলায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলায় এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩০৮ কোটি টাকা। এবারের ভয়াবহ বন্যা অতীতের যেকোনো ক্ষতিকে ছাড়িয়ে গেছে। আজ সকালে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বাসসের কাছে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, বন্যার কারণে গত প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা কয়েক ফুট পানির নিচে প্লাবিত হয়। নিচু এলাকাগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়েছে। জেলাজুড়ে বন্যায় প্রাণিসম্পদে ৪ হাজার ২১৩টি গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া জেলার ২ লাখ ৯ হাজার ৯১৪টি বিভিন্ন শ্রেণির গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার বাজার মূল্যে পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ কোটি টাকার বেশি। তার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত গরুর সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার ৬২২টি, ১৬টি মহিষ, ৩০ হাজার ৮৯২টি ছাগল, ৬৯৩টি ভেড়া। মারা গেছে ৩৫টি গরু, তিনটি মহিষ, ১৭১টি ছাগল, এবং সাতটি ভেড়া।
হাঁস-মুরগীর মধ্যে ২ হাজার ২১৮টি খামারে ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৯টি হাঁস-মুরগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার বাজার মূল্যে ৩৯ কোটি টাকা। এসবের মধ্যে ২১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩টি মুরগী, ৩১ হাজার ৬৯৩টি হাঁস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৪২টি মুরগী এবং ২ হাজার ১৬০টি হাঁস। প্লাবিত হয়েছে ২ হাজার ১ দশমিক ৫ একর চারণভূমি। খাদ্যের মধ্যে ২ হাজার ৬০৩ টন পশুপাখির দানাদার খাদ্য বিনষ্ট হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৫৯ কোটি টাকা। ৫৫ হাজার ৪৩৪ টন পশুপাখির খড় বিনষ্ট হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৮৯ কোটি টাকার বেশি। এছাড়াও ৫৮ হাজার ৭৫১ টন ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৭০ কোটি টাকা। মৃত পশুপাখিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
জেলার বুড়িচংয়ে একতা পোল্ট্রির সত্ত্বাধিকারী শাহআলম বাসসকে বলেন, বন্যার পানি ঢুকে খামারে ২১ দিন বয়সী আট হাজার মুরগী মারা যায়। যার দাম প্রায় ১৯ লাখ টাকা। এছাড়া গরুর খামারে ৮টি বাছুর ও সাতটি বড় গরু মারা যায়, যার দাম প্রায় বারো লাখ টাকা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বাসসকে বলেন, বন্যায় চৌদ্দটি উপজেলায় প্রাণিসম্পদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে ক্ষতি অপূরণীয়। পুরো জেলায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। প্রাণিসম্পদে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আমরা বন্যার পানি নেমে গেলে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি পরিমান জানা যাবে।