ডিবি হারুনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)র আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। এ তথ্য জানিয়েছেন দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। আদালতসূত্র জানা যায়, পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিচারক আদেশের একটি অনুলিপি বিশেষ শাখার স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশের (ইমিগ্রেশন) কাছে পাঠিয়েছেন।

দুদকের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন সাবেক ডিবি-প্রধান হারুন অর রশীদ ও তার স্ত্রী শিরিন আক্তারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ওই দম্পতি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন-মর্মে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তাই তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। হারুনের বিরু অবৈধ উপাযে বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানাধীন।

এর আগে ১৮ আগস্ট হারুন অর রশিদ এবং তার স্ত্রী, সন্তান ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়। উল্লেখ্য,কোটা সংস্কার চেয়ে মাঠে নেমেছিল শিক্ষার্থীদের গড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ আন্দোলন দমাতে শুরু থেকে মারমুখী ছিল পুলিশ। ছাত্রদের সেই আন্দোলন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক দমন-নিপীড়ন আর ধরপাকড়ে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। কোটার আন্দোলন গিয়ে ঠেকে এক দফার সরকার পতনের আন্দোলনে। এ আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ভেঙ্গে পড়ে শেখ হাসিনার সাজানো পুলিশের চেইন অব কমান্ড।

হাসিনার দেশত্যাগের পরই তার সরকারের মেয়াদে দাপুটে হিসেবে পরিচিত পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের আটক হওয়ার খবর চাউর হয়। কিন্তু পরদিন তিনি নিজেই আটক হওয়ার খবরটি নাকচ করে দেন। এরপর থেকে একরকম ‘উধাও’ এ কর্মকর্তা। পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পুলিশের প্রভাবশালীদের সঙ্গে একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে হারুনকেও। তবে এখন তিনি কোথায় আছেন এ নিয়ে সৃষ্টি ধোঁয়াশা কাটছে না।

২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিএমপির ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে ভাত খাওয়ানো এবং সেসব ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে বেশ আলোচনায় ছিলেন।
সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কারীকে নিরাপত্তা দিতে তার কার্যালয়ে কয়েকদিন আটকে রাখেন হারুন। তাদের আপ্যায়ন করার কয়েকটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলে আবার সমালোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ উষ্মা প্রকাশ করে বলেন,‘ ডিবি অফিসে যাকে-তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না !’ পরে গত ৩১ জুলাই তাকে ডিবি থেকে ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগে বদলি করা হয়।