তৈয়ব উল্লাহ নাসিম
ধরুন একজন ডাক্তার বাংলাদেশ ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে জেনে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বাজারে পাওয়া বই কিনে পড়ে তত্ত্ব দেয়া শুরু করলো। এক পর্যায়ে ঐ ডাক্তার বলে বসলো, “বাংলাদেশের সব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলো কাঠ ইঞ্জিনিয়ার বা নামের ইঞ্জিনিয়ার কামের না! এরা শুধু ইংরেজি শব্দার্থ কিছু শিখেছে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যেয়ে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কিছুই আয়ত্তে আনতে পারেনি। এদেরকে আরো আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আসতে হবে। এদের জন্য ঢাকা শহরের সব বিল্ডিং ঝুঁকির মধ্যে আছে।”
প্রিয় পাঠক আপনারা এই ডাক্তারকে কি সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বলে মনে করবেন, না তার মাথায় কিছু গণ্ডগোল আছে বলবেন।
একজন গোলাম মাওলা রনিরও ঠিক এমন দশা হয়েছে। মতিভ্রম ঘটেছে তার ভালভাবে। ইদানিং সবজান্তার মতো সেও ইসলামী পন্ডিত সেজেছে বাজারের বই পড়ে। বাংলাদেশে কোনো আলেম তার চোখে পড়ছে না! যারা আছেন তাঁরা সবাই তার ভাষায় কাঠমোল্লা। এরা হাদীস কুরআন কিচ্ছু বুঝে না। এদের সবাইকে নাকি আধুনিক ইসলাম পড়ে আসতে হবে। এখন বলুন আপনারা, গোলাম মাওলা রনির কথাগুলো আর উপরে বিবৃত ডাক্তারের কথার মাঝে কি কোনো ফারাক আছে। তাহলে আপনারা এই রনিকে এখন কি বলবেন?
জনাব গোলাম মাওলা রনির আপত্তি হলো কিছু আবেগি পাবলিকের আবেগি কথাবার্তা তিনি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছেন, যারা বলছেন মরলে মসজিদে মরবো। চীন মসজিদ খুলে দিয়েছে, আমরা কেন বন্ধ করতে যাবো ইত্যাদি। এবং তার ভাষায় যারা এগুলো বলেছে তারা হুজুর। তার এসব যুক্তি দেখে তাজ্জব না হয়ে পারলাম না। প্রথমত ইউটিউবাররা থাম্বনেইল বানায় ভিউ বাড়ানোর জন্য, ভেতরে কি বক্তব্য আছে সেটা যখন স্রোতা পুরো ভিডিও দেখে তখন বোঝা যায়। দ্বিতীয়ত কোথাকার কোন বক্তা বা আম পাবলিক কি বলেছে, সেটার জন্য পুরো আলেম সমাজকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগি পাবলিক কি গুজব ছড়িয়েছে চীনের মসজিদ নিয়ে, বা এরদোগান কে নিয়ে কে কি ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে এসবের জন্য শীর্ষস্থানীয় আলেম থেকে পুরো আলেমসমাজকে কাঠামোল্লা বলে ভাঁড়ামো করা কোন সুস্থ মানসিকতার পর্যায়ে পড়ে আমার বোধগম্য নয়। উলামায়ে কেরামের প্রতিনিধিত্ব করেন, এমন কেউ কি তার অভিযুক্ত বক্তব্যগুলো দিয়েছেন। আমি বলবো এটা গোলাম মাওলা রনির মিষ্টি কথার ভাঁড়ামো ছাড়া আর কিছুই নয়।
এইযে সরকার বারবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশের সব ঘরানার ইসলামী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈঠক করছেন, এর কি প্রয়োজন ছিলো? ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্তাব্যক্তিরাইতো ইবনে আব্বাসের রা. হাদীসটা বই থেকে বের করে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিতে পারতেন। কেন করছেন না তারা, কারণ প্রত্যেক বিষয়ের জন্য সেই সেক্টরের অভিজ্ঞদের মতামতই চুড়ান্ত। ডাক্তার যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে না, ঠিক তেমনি ইসলামী বই পড়েই কেউ ইসলামী বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে না।
পরিশেষে গোলাম মাওলা রনির মতো এমন অতি পন্ডিতদের সুমতি কামনা করছি। মতিভ্রষ্ট হয়ে মানুষ উল্টপাল্টা বকতে থাকে। নিজেকে ভাবতে থাকে সবজান্তা। শুধু গোলাম মাওলা রনি নয়, আরো অনেকেই এমন দোষে দুষ্ট। সবার সুমতি হোক, আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দিন।
Sharing is caring!