আন্তর্জাতিক স্পোর্টস ডেস্ক: ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার পচেস্ট্রমে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিল টিম টাইগার। বৃষ্টি বিঘ্নিত ফাইনাল ম্যাচে ৪২.১ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় বাংলাদেশ। অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দিয়েছেন আকবর আলী। তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৩ রানে। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন বোলার রাকিবুল হাসান। তিনি অপরাজিত থাকেন ৯ রানে। প্রথমে ব্যাট করে ৪৭.২ ওভারে ১৭৭ রান করে অলআউট হয় ভারত। জবাবে ডার্ক লুইস পদ্ধতিতে ৪৬ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৪২.১ ওভারে ১৭০ রান করে বাংলাদেশ।
ভারতকে অল্প রানের মধ্যে বেঁধে রাখায় ইতিহাস গড়ার স্বপ্নের হাতছানি ছিল টিম টাইগারের সামনে। রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার পারভেজ হাসান ইমন ও তানজিদ হোসেন। ভারতীয় বোলারদের ভালই সামলাচ্ছিলেন দুই ওপেনার। স্কোর বোর্ডে ৫০ রান তোলার পরে রবি বিষ্ণোইকে মারতে গিয়ে কার্তিক ত্যাগীর হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তানজিদ (১৭)। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে মাহমুদুল হাসান জয়ের সেঞ্চুরির সুবাদে ম্যাচ জিতে ফাইনালে পৌঁছেছিল বাংলাদেশ। এ দিন অবশ্য মন জয় করা ইনিংস খেলতে পারলেন না তিনি। রবি বিষ্ণোইয়ের গুগলিতে বোল্ড হয়ে মাত্র ৮ রানে সাজঘরে ফিরলেন জয় (৮)। বিষ্ণোইয়ের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়ে শূন্য রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন তৌহিদ হৃদয়।
শাহদাত হোসেনও ব্যর্থ হন। ১০ বল খেলে মাত্র ১ রান করে বিষ্ণোইয়ের বলেই সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। কার্যত বিষ্ণোইয়ের বিষাক্ত ছোবলে হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। ৬২ রানে ১ উইকেট থেকে ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে আচমকাই ছন্দপতন ঘটে।
অধিনায়ক আকবর আলীর সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন শামীম হোসেন। কিন্তু মাত্র ৭ রানের মাথায় সুশান্ত মিশ্রের বলে আউট হন তিনি। বাংলাদেশের স্বপ্ন গড়ার আশাও সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায়। দলের ১০২ রানের মাথায় সুশান্ত মিশ্রের বলে কার্তিক ত্যাগীর হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বোলার অভিষেক দাস। ৭ বলে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ৫ রান। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন আকবর আলী। ১০২ রানে ছয় উইকেট পতনের পর অধিনায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেন আহত হয়ে অবসৃত হওয়া ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। দু’জনে দেখেশুনে ব্যাট করতে থাকেন। দুই তরুণের ব্যাটিংয়ে নতুন করে জয়ের আশায় বুক বাঁধেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। কিন্তু দলীয় ১৪৩ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৪৭ রানে আউট হন ইমন। যশস্বী জয়সোয়ালের বলে আকাশ সিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ফলে ফের হতাশ হয়ে পড়েন বাংলাদেশের সমর্থকরা। অষ্টম উইকেটে অধিনায়কের সঙ্গে জুড়ি বাঁধেন বোলার রাকিবুল হাসান।
রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার পচেস্ট্রমে যুব বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সঠিক সময়ে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিলেন প্রিয়ম গর্গ-দিব্যাংশ সাক্সেনারা। পদ্মাপারের বোলারদের দাপটে ১৭৭ রানে গুটিয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। শুরু থেকেই বাংলাদেশের পেসারদের দাপটের সামনে অসহায় দেখাল ভারতীয়দের। প্রথম ছয় ওভারে উঠল মাত্র ৮ রান। সপ্তম ওভারে প্রথম উইকেটের পতন। ২ রানে সাজঘরে ফিরলেন দিব্যাংশ সাক্সেনা। তিলককে সঙ্গে নিয়ে কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে কিছুটা টানলেন যশস্বী জয়সওয়াল। ৮৯ বলে অর্ধ শতরান পূর্ণ করলেন। প্রতিযোগিতায় এই নিয়ে চার বার পঞ্চাশের গণ্ডি টপকালেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে যশস্বী-তিলক যোগ করেন ৯৪ রান।
যশস্বীর পঞ্চাশের পরই মারতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন তিলক (৬৫ বলে ৩৮)। বেশিক্ষণ টিঁকলেন না অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গও (নয় বলে ৭)। যখন মনে হয়েছিল যশস্বীর ব্যাটের দাপটে পরিস্থিতি সামলে ঘুরে দাঁড়াবে ভারত ঠিক তখনই ডেথ ওভারে পর পর ধাক্কা। পর পর দুই বলে আউট হলেন যশস্বী ও সিদ্ধেশ ভির। দেড়শো পেরিয়ে যাওয়ার পর শরিফুল ইসলামকে শর্ট আর্ম পুল মারতে গিয়ে আউট হলেন যশস্বী। তাঁর ১২১ বলে ৮৮ রানের ইনিংস সাজানো আটটি চার ও একটি ছয়ে। শরিফুলের পরের বলেই এলবিডব্লিউ হলেন সিদ্ধেশ (এক বলে ০)।
প্রথম থেকেই ধুঁকছিল ভারতীয় ইনিংস। প্রথম পঞ্চাশ এসেছিল ৯৭ বলে। পরের পঞ্চাশের জন্য লেগেছিল ৭৩ বল। আর ১০০ থেকে ১৫০ রানে পৌঁছতে লাগল ৬২ বল। দুর্দান্ত ফিল্ডিং করলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ইনিংসের শেষের দিকে পর পর দুটো রান আউট তারই প্রমাণ। ধ্রুব জুড়েল ও অথর্ব আনকোলেকর তো ভুল বোঝাবুঝিতে দু’জনেই একপ্রান্তে পৌঁছে গেলেন। আউট হলেন ধ্রুব (৩৮ বলে ২২)। এর পর রান আউট হলেন রবি বিষ্ণোই (ছয় বলে ২)। অভিষেক দাসের বলে ব্যাটে লাগিয়ে বোল্ড হলেন অথর্ব (সাত বলে ৩)। কার্তিক ত্যাগীও (পাঁচ বলে ০) শিকার হলেন অভিষেকের। তানজিম হাসান শাকিবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন সুশান্ত মিশ্র। ১ রানে অপরাজিত থাকলেন আকাশ সিংহ।
১৫৬ রানে চতুর্থ উইকেট পড়েছিল ভারতের। সেখানে থেকে ১৭৭ রানে দাঁড়ি পড়ল ইনিংসে। পুরো ৫০ ওভারও খেলতে পারলেন না ব্যাটসম্যানরা। ৪৭.২ ওভারেই দাঁড়ি পড়ল ইনিংসে। শেষ সাত উইকেট পড়ল মাত্র ২১ রানে। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সফল অভিষেক দাস (৯ ওভারে ৪০ রানে ৩ উইকেট), শরিফুল ইসলাম(১০ ওভারে ৩১ রানে ২ উইকেট), তানজিম হাসান শাকিব (২৮ রানে ২ উইকেট)।