তৃতীয় পর্বের পর….
আজকের পর্বে আমরা জানব বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
বিয়ে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। মানবজীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়ে করা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহ হয় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা পালন করে। কেননা রোজা হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম”। (বুখারী-৫০৬৫; মুসলিম-১৪০০)
উক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায়, কোন ব্যক্তি সামর্থ্যবান হলেই বিয়ে করে নেয়া উচিত।
ছেলে মেয়ে বিয়ের ক্ষেত্রে দেরি করা ঠিক নয়।এতে যৌবনের তাড়নায় সন্তান কোনো পাপ করলে তার দায়ভার অভিভাবকের উপরেও পড়ে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“তোমাদের মাঝে যার কোনো (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়; যখন সে বালেগ অর্থাৎ সাবালক/সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিয়ে দেয়; যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয় তাহলে, সে কোন পাপ করলে উক্ত পাপের দায়ভার তার পিতার উপর বর্তাবে। (বায়হাকি-৮১৪৫)
কিন্তু আমাদের অভিভাবকেরা যেন এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন।তাদের চিন্তা চেতনায় কখনো এসব ভাবনা যেন আসেই না! অথচ কবরে গিয়ে দেখবে সন্তানের গোনাহের ভাগ নিজের আমলনামায় আসতে আসতে তা পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে গেছে! তখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবেনা।
নবীজি (সা.) বিয়েকে সুন্নত বলে ঘোষণা করেছেন। হাদিসের ভাষ্য, ‘বিয়ে আমার সুন্নত। অতএব যে আমার সুন্নত পালন থেকে বিরত থাকবে, সে আমার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১০৩৯০)।
বিয়ে ইমানের অর্ধেক। নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোন ব্যক্তি যখন বিয়ে করল তখন সে দ্বীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। এখন সে যেন বাকি অর্ধাংশের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ ২/২৬৮)।
আমরা অনেকে বিয়ের ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে খুব বেশি বিত্তবান হওয়াকে অধিক গুরুত্ব দেই। এক্ষেত্রে নিচের হাদিসটি আমাদের জন্য শিক্ষা হতে পারে।
হযরত সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার নিজেকে আপনার জন্য উপহার দিতে এসেছি (পরোক্ষ ভাষায় বিয়ের প্রস্তাব)। তখন নবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করে মাথা নিঁচু করলেন। মহিলাটি যখন দেখল যে নবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না। তখন সে বসে পড়ল। এমন সময় রাসূল সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীদের একজন বলল, যদি আপনার কোন প্রয়োজন না থাকে, তবে এ মহিলাটির সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়ে দিন।
তিনি বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম কিছুই নেই। তিনি বললেন: তুমি তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাও এবং দেখ কিছু পাও কি না? এরপর লোকটি চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল: আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিছুই পেলাম না।
নবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: দেখ, একটি লোহার আংটি হলেও! তারপর সে চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল: আল্লাহর কসম, একটি লোহার আংটিও পেলাম না। কিন্তু এই যে আমার লুঙ্গি আছে। সাহল (রাঃ) বলেন, তার কোন চাদর ছিল না। অথচ লোকটি বলল: এটাই আমার পরনের লুঙ্গি; এর অর্ধেক দিতে পারি। এ কথা শুনে রাসূল সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমার লুঙ্গি দিয়ে সে কি করবে? তুমি পরিধান করলে তার গায়ে কোন কিছু থাকবে না। আর সে পরিধান করলে তোমার গায়ে কোন কিছু থাকবে না। তখন লোকটি বসে পড়লো এবং অনেকক্ষণ সে বসেছিল। তারপর উঠে গেল।
রাসূল সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ফিরে যেতে দেখে ডেকে আনলেন। যখন সে ফিরে আসল, নবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন: তোমার কতটুকু কুরআন মুখস্থ আছে? সে গুণে বলল, অমুক অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে। তখন নবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি এ সকল সূরা মুখস্থ তিলাওয়াত করতে পার? সে বলল: হ্যাঁ! তখন নবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যাও তুমি যে পরিমাণ কুরআন মুখস্থ করেছ এর বিনিময়ে এ মহিলার সাথে তোমার বিবাহ দিলাম। [সহিহ বুখারী (৫০৩০) সহিহ মুসলিম (১৪২৫)]
আমরা কি আলোচ্য হাদিসের সাহাবীর থেকেও বেশি গরীব? বর্তমান সময়ে এত অসহায় আর গরীব মানুষ কি খুঁজে পাওয়া যাবে? প্রশ্ন রইল সচেতন প্রতিটি মানুষের বিবেকের কাছে!
উপরোক্ত হাদিসে দলিল রয়েছে যে, দারিদ্রতা সত্তাগতভাবে বিবাহকে বাধা দেয় না; যদি পাত্র দ্বীনদার হয় এবং নিজ প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাসী হয় এবং পাত্রীও সে রকম হয়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
“তোমাদের মধ্যে যাদের স্বামী বা স্ত্রী নেই তাদের বিয়ের ব্যবস্থা কর, তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ ও যোগ্য তাদেরও। তারা যদি দরিদ্র হয় তাহলে আল্লাহ্ই নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ্ মহা দানশীল, মহাজ্ঞানী”। [সূরা নূর, আয়াত: ৩২]
সুতরাং আল্লাহ্র উপর যথাযথ তাওয়াক্কুল, চরিত্র রক্ষার আকাঙ্ক্ষা, আল্লাহ্র অনুগ্রহ প্রত্যাশা থাকলে আশা করা যায় এমন দম্পতিকে আল্লাহ্ সাহায্য করবেন এবং তাঁর অনুগ্রহ থেকে রিযিক দিবেন। যেমনটি সুনানে তিরিমিযিতে (১৬৫৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: