- সাইয়াদুর রহমান (রংপুর)
- তরুণ লেখক
গ্রামের গল্পগুলো চমৎকৃত নয় চমৎকার হয়। আর এই স্বচ্ছ গ্রামীন রুপগুলো খুজে পাওয়া যায় পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের কবিতায় অথবা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসে ভরা কোনো উপন্যাসে।
গ্রামকে সাহিত্যের রঙে রাঙিয়ে অনেক কবি সাহিত্যিক রঙিন হয়ে আছেন ইতিহাসের পাতায় অথবা মানুষের হৃদয়ে। আজ আমি যে চরিত্রকে কেন্দ্র করে লিখতে বসেছি তা কেবলি সেসব রঙিন মনের অমর গুনীজনকে অনুসরণ মাত্র। হ্যা বন্ধুরা! এই লেখাটির মূখ্য চরিত্রে দেখা যাবে এক গ্রামীন ব্যক্তিকে। চলুন তবে শুরু করি!
গ্রামের নাম ছুটিপুর। গ্রামের নামটি যেমন মনকাড়া তেমনি এর পরিবেশ প্রকৃতি হৃদয়ছোয়া। ঠিক যেনো শিল্পীর তুলিতে ফুটিয়ে তোলা একটি ছবি। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট নদী কাকিনা। ছুটিপুরের সামনে-পিছনে,ডানে-বায়ে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের সমরোহ।
অবশ্য সারা বছর এ দৃশ্যপট থাকেনা। গ্রামটি হাওর এলাকায় হওয়ায় আবাদী জমিগুলো ছয়মাস পানির নিচে থাকে। এরকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়া সত্ত্বেও ছুটিপুরের বাসিন্দারা সব ধরণের আধুনিক সুবিধা পেয়ে থাকে।
গ্রামের মধ্যে আছে বিদ্যুৎ এর সুব্যবস্থা এবং একটি পিচ ঢালা রাস্তা। আর এ সব কিছুর জন্য যে ব্যক্তিটির অবদান সবচেয়ে বেশী তিনি হলেন গ্রামের বিখ্যাত মির্জা পরিবারের প্রধান কর্তা মির্জা সাহেব।
মির্জা সাহেব গত দুই বছর আগে রাজশাহী ভার্সিটি থেকে রিটার্ড করে গ্রাম্য জীবন উপভোগ করতেছেন। বর্তমান মির্জা পরিবারের নিয়মিত সদস্যরা হচ্ছেন মির্জা সাহেব, নুরনাহার বেগম(মিসেস মির্জা), সদ্য ঢাবি থেকে লেখা-পড়া শেষ করা ছোট ছেলে রনি মির্জা আর বেশ কিছু চাকর-বাকর। বাকি সদস্যরা ঢাকায় থাকেন।
রনি মির্জার চাকুরীর প্রতি কোনো ঝোঁক নেই। তাইতো লেখা-পড়া শেষ করে সোজা গ্রামে চলে এসেছে। গ্রাম এবং তার মাঝে যে আকর্ষণ বল কাজ করে তা চুম্বকার্ষণের চেয়েও কোনো অংশে কম নয় বরং একটু বেশী। যাইহোক, এই রনি মির্জাই হচ্ছে আমাদের সকলের প্রিয় অরবিট ভাই।
আমরা এলাকার সমবয়সী যুবক যারা আছি তারা সকলেই অরবিট ভাইয়ের প্রিয়। আর অন্য সবার থেকে আমি একটু বেশী প্রিয়। আমরাও তার ভক্ত। আর যথারীতি আমি অন্যদের চেয়ে বড় এবং প্রধান ভক্ত।
ভাই আমাকে সাথে নিয়ে ঘুরতে ভালোবাসে। তবে আমাদের প্রতিটি ভ্রমণ হয় উদ্দেশ্য নির্ভর। এইতো সেদিনের ঘটনাই বলি। হঠাৎ কাক ডাকা ভোরে ফোন বেজে উঠলো আমার। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রনি ভাইয়ের যান্ত্রিক গলা বলে উঠলো, -শাওন! দ্রুত রেডি হয়ে নে, তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো। -কো…
কথা শেষ না হতেই ফোন কেটে দিলো। সাত-পাচঁ না ভেবে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেতে খেতে রেডি হলাম। অতঃপর সর্বদা গোছানো ব্যাগটা কাধে ফেলে বেড়িয়ে পরলাম। ব্যাগ সর্বদা গুছিয়েই রাখি। কারণ,সে হুট করেই পরিকল্পনা করে। তাই গোছানোর সময় পাওয়া যায় না।
মির্জা বাড়িতে ঢুকেই দেখলাম রনি ভাই বাইনোকুলারটা খুতিয়ে দেখছেন পাশেই পড়ে আছে তার প্রিয় DSLR টা। আমি তার ভাবগতি জানতে চাইলাম। মাথা না তুলে তিনটি পূর্ণবাক্য একসাথে জুড়ে দিয়ে একবাক্যে উত্তর দিল,
-আমাদের গন্তব্য বিচুলি উপবনে এবং আজ রাত সেখানেই থাকবো আর বাহন হচ্ছে বাবার স্পিড বোট।
কথাটা শুনে আমার গা রীতিমতো শিউরে উঠলো। কত ভয়ানক ঘটনাই না ঘটতে শুনেছি এই বিচুলি উপবনে। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
-ভাই! বিচুলি বনেই কেনো? এতো জায়গা থাকতে!
-চল্! আমার কাজ শেষ। বোটে উঠে তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিব।
চলবে……
পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন ……..
Sharing is caring!