শরিফুল ইসলাম রিয়াদ
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে” এই শ্লোগানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অতি পাইনসা ও সস্তা জ্ঞানীদের শব্দে পরিনত হয়েছে।
একটি মহল নিজের বুদ্ধি ও তর্কের ওপর ভর না করে পশ্চিমার মাথাকে নিজের মাথা আর পশ্চিমার চিন্তাকে নিজের চিন্তা ভেবে অতি জ্ঞানী সাজতে গিয়ে এই অজ্ঞাতর বুলি আউড়িয়ে যায়।
তারা ধর্ম ও রাষ্ট্রকে আলাদা ভেবে পশ্চিমা বিশ্বের তাবেদারি করতে চায়।
এই মাথা মোটা জ্ঞানীর দল ইসলামকে হিন্দু, বৌদ্ধ আর খ্রীষ্টান ধর্মের ন্যায় নিছক একটি ধর্ম ভেবে নিয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই।
যদি তাই ভেবে থাকে তাহলে এদের জ্ঞানের দৈন্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
যেখানে ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার কথা বলে, রাষ্ট্র চিন্তার একটি কার্যকর রূপরেখার প্রস্তাব করে।
ইবনে খালদুন, আল রাজী আর আল কিমীদের মত প্রখ্যাত ইসলামি রাষ্ট্র চিন্তকরা মধ্যযুগের রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র চিন্তক বলে বিবেচিত হয়।
সেখানে ইসলামকে শুধু মাত্র হিন্দু, বৌদ্ধ অার খ্রীষ্টান ধর্মের ন্যায় ধর্মীয় গন্ডিতে অাবদ্ধ করা পরাজিত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বল্লে ভুল হবেনা।
অন্যদিকে
আমরা মনেকরি, কিছুলোক একত্রিত হয়ে কোন আদর্শের রাজনীতির বিরোধিতা করলেই সেই আদর্শের রাজনীতি বন্ধ হয়ে যায় না বা বন্ধ করতে পারেনা৷
এর আইনগত ভিত্তি ও যৌক্তিক কারণ থাকা চাই।
প্রথমত যারা এ দাবী করে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনাদের এই দাবি সংবিধানের অন্ততঃ ৮ টি অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক ৷
অনুচ্ছেদগুলো হলো : ৭ এর ১,২, ২৮ এর ১ ও ৩ , ৩৭ , ২৬ এর ১ও ২ , ৩৬ , ৩৮ এর ক , খ, গ, ঘ , ৩৯ এর ১ ও ২ এর ক , ৪১ এর ১ এর ক, খ, এবং ৪১ এর সাথে সাংঘর্ষিক।
যারা বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করার বয়ান দেন তারা ধারাগুলো দেখে নিতে পারেন।
দ্বিতীয়তঃ
আবার অনেকই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর “পরিবেশ পরিষদ” নামিয়েও সল্প মেয়াদি সংগঠনের এর দোহাই দিয়ে ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির মাধ্যমে ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায়।
তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন…
যে ‘পরিবেশ পরিষদ’ এর দোহাই দেন তার আইনগত ভিত্তি কি?? নাকি পরিবেশ পরিষদ দেশের আইনসভা?
উত্তর হয়তো বলবেন
কোনাটাই না!!
তাইলে পরিবেশ পরিষদ এর এই অহেতুক গান টা আর না বাজানোই শ্রেয়।
যেখানে সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় সবাইকে সংগঠন, সভা সমাবেশ , চিন্তা ,ও আদর্শ প্রচার ও পালনের অধিকার দেয়া হয়েছে সেখানে সাময়িক ব্যবস্থার পরিবেশ পরিষদ এর দোহাই দেওয়া কেন অযৌক্তিক, হাস্যকর ও অসাংবিধানিক হবেনা।
অন্যদিকে
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ,গণতন্ত্র ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার উর্বর জায়গা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মত পথের মানুষ হাত ধরে পাশাপাশি হাটবে৷ সবাই যার যার কথা বলবে। শিক্ষার্থীরা যার যার পছন্দের মত গ্রহণ ও বর্জন করবে। এক পক্ষ অন্য পক্ষের গঠনমূলক সমালোচনা কিংবা বুদ্ধবৃত্তিক বা রাজনৈতিক উপায়ে প্রতিযোগী হয়ে উঠবে এটাই গণতন্ত্রের দাবী।
কিন্তু আপনারা যুক্তি – তর্কের তোয়াক্কা না করে একটি আদর্শকে ঠুনকো প্রগতির ভাব ধরে মত প্রকাশে বাঁধা সৃষ্টি করতে চান।
যত্তসব ফালতু প্রগতির খোঁটা!!!
ঠুনকো বুদ্ধিমান বন্ধুদের বলতে চাই….
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির পক্ষে শ্লোগান দেওয়ার আগে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বলতে কি বুঝাতে চান তার সংজ্ঞায়ন কি করেছেন??
সংজ্ঞায়ন না করলে এই দাবিতো “To tell a bull story মনে হবে!!
আদতে কোন সংজ্ঞায়ন করেছেন বলে অামাদের জানা নাই।
যদি সংজ্ঞায়ন করেই থাকেন
প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে দেখেন অাপনাদের তৈরিকৃত সংজ্ঞার কটু কৌশলে গণতন্ত্র,জাতীয়তাবাদ অার সমাজতন্ত্র হয়তো বর্তমান সময়ে অপ্রাসঙ্গিক প্রমাণিত হবে
কিন্তু ইসলাম যে সর্বকালেই সার্বজনীন ও গতিশীল তা আবারো প্রমাণিত হবে।
ইসলামকে জানুন,বুঝুন ও ব্যাপ্তি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করুন।
সস্তা জ্ঞানীর পরিচয় দিয়ে সামপ্রদায়িকতা, মৌলবাদ অার ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এই সব পাইনসা শব্দ উচ্চারণের রাজনীতি বন্ধ করে তর্ক ও যৌক্তি দিয়ে যে কোন অাদর্শকে মোকাবেলা করুন।
লেখক-:
তরুণ লেখক ও সংগঠক
Sharing is caring!