রহমতুল্লাহ মুখতার:
এই শিরোনামে হয়তো বহু লেখা পড়েছেন, আমিও কিছু পড়েছি। তবে কখনো এটা ভাবিনি যে, শেষতক আমাকেও এই বিষয়ে লিখতে হবে! যেহেতু এই শিরোনামের বহু লেখা পড়ে আমরা ক্লান্ত, তাই আনুষাঙ্গিকতা না বাড়িয়ে মূল পয়েন্টে চলে যাচ্ছি।
আজকের এই লেখাটির মাধ্যমে
‘করোনা রহমত, না গজব’ সেটা আমি নিজে বলব না, বরং ইন্টারেস্টিং ব্যপার হলো সেটা বলবেন আপনি! কি অবাক হচ্ছেন? না, অবাক হওয়ার কিছু নেই।
করোনাভাইরাস ( Covid19) আমাদের কী কী উপকার করেছে :
প্রথম এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমরা যেই পৃথিবীতে বাস করি, তাকে ঘিরে রয়েছে একটি বলয়। যাকে বলা হয় ‘গ্রীনহাউজ’৷
পৃথিবীকে ঘিরে রাখা এই বলয়টির প্রোটেক্টিভ প্রভাবের কারণে সুর্যের অতিবেগুনী রশ্মি সরাসরি আমাদের উপর পড়েনা। ফলে পৃথিবী ও তার মধ্যে অবস্থিত প্রতিটি প্রাণী বা বস্তু অধিক তাপমাত্রার মতো অসহ্যকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পায়।
কিন্তু, আমাদের বেপরোয়া চলাফেরা, গণহারে পরিবেশ দূষণ ও কৃষিকাজে রসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে সেই আশির্বাদস্বরুপ ‘গ্রীনহাউজ বলয়ে’র মাঝে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল।
শুধু তাই নয়, পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার কারণে পৃথিবীতে পানির গভীরতা কমে গিয়ে যেভাবে সমুদ্রের পানি উপরের দিকে উগলে উঠছিল, তা পৃথিবীবাসীর জন্য রীতিমতো দুঃশ্চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
যেহেতু বিশ্বব্যাপী এই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (Covid19) ছড়িয়ে পড়েছে, তাই আক্রান্ত দেশগুলো লক ডাউন, কোথাও কারফিউ জারি করে রেখেছে। ফলশ্রুতিতে মানুষের অবাধ চলাফেরা ব্যাহত হয়েছে। পরিবেশ দূষণ কমেছে। তাই গ্রীনহাউজে যেসকল ছোট ছোট ছিদ্র হয়েছিল, সেগুলো পুনরায় তার আগের মতো মজবুত ও শক্তিশালী বলয় সৃষ্টি করেছে। যা সমগ্র মানবজাতির জন্য একপ্রকার…..। নাহ্ , আমি বলবনা। আপনিই বলুন।
দ্বিতীয়ত: ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, চীন, আফগান, কাশ্মীর, ইয়েমেন, আফ্রিকা, যেখানে অত্যন্ত নির্মমভাবে মুসলমানদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছিল, যেখানে মুহুর্মুহু ড্রোন আর বোমারু বিমানের আনাগোনা ছিল, যে দেশগুলোর আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে গিয়েছিল বারুদের দমফাটা উৎকট দুর্গন্ধ, যাদের বুকফাটা হৃদয়ের করুণ আর্তনাদ নির্বাক করে দিয়েছিল সমগ্র বিশ্বকে৷
সম্প্রতি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ভারতে যেভাবে নির্মম কায়দায় মুসলমানদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো শুরু হয়েছিল, গুজরাটের মত দিল্লিতে দাঙ্গায় মুসলিমদের নিহত ও ঘরবাড়ি পোড়ানো হলো, ঠিক তখনই বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ল প্রাণঘাতী এই ভাইরাস।
যদ্দরুণ এখন আর নিপীড়িত জনপদগুলোতে তাদের দাম্ভিক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়না। মজলুম শহর-নগরগুলোর আকাশে আর বোমারু বিমানের উড়োউড়ি পরিলক্ষিত হয় না। শরনার্থী শিবিরে অন্ততপক্ষে হঠাৎ মৃত্যুর ভয় নেই। তাহলে এবার বলুন,করোনা আমাদের জন্য…………….।
সারা বিশ্বের নির্যাতিত- নিষ্পেষিত মুসলিম উম্মাহর কন্ঠে যখন ধ্বনিত হতে লাগল,
হে প্রভু! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ হতে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।
( সুরা নিসা,আয়াত: ৭৫)
ঠিক তখনই দরবারে ইলাহিতে কম্পন সৃষ্টি হলো। আরশের মালিক, রাজাধিরাজ,
মহান রব্বুল আলামিন এতকাল যাবত নিজেদের বদ আমলের কারণে সাময়িক পরীক্ষায় থাকা বান্দাদের দিকে তাঁর রহমের হাত বাড়িয়ে দিলেন, নিবদ্ধ করলেন তাঁর ‘করুণা’র দৃষ্টি। কাফের- মুশরিক – বেঈমানদের শায়েস্তা করার জন্য পাঠিয়ে দিলেন ‘করোনাভাইরাস’ ( Covid19)৷
উপরের নিকটতম কয়েকটি লাইন পড়ে আপনার মনে সংশয় জাগতে পারে যে, ‘ করোনা ভাইরাস ‘ যদি স্পেশালি কাফের- মুশরিক- বেঈমানদের জন্যই হয়ে থাকে, তাহলে মুসলমানরা কেন এ-রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুবরণ করছে? ওয়েল, তাহলে আমরা আগে এর উত্তর জেনে পরের আলাপে যাই।
লক্ষ্য করুন, হজরত জারীর ( রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যদি কোন দল বা কওমের মধ্যে কোন ব্যক্তি গোনাহ করে এবং সেই কওম বা দলের লোকেরা শক্তি থাকা সত্ত্বেও তাহাকে বাধা প্রদান করে না; তবে তাহাদের উপর মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা আজাব পাঠিয়ে দেন অর্থাৎ দুনিয়াতেই তাহাদিগকে বিভিন্ন ধরণের মুসীবতের মধ্যে লিপ্ত করে দেওয়া হয়।”
সুতরাং উপরের হাদিস সমূহ দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, পাপকর্ম দেখলে সাধ্যানুযায়ী বাধা প্রদান করতে হবে ; নইলে কিছু মানুষের কারণে গোটা উম্মতকেই দুনিয়াবি শাস্তি পেতে হবে। তবে আখেরাতের হিসাব ভিন্ন। আর মুসলমানদের জন্য আল্লাহর তরফ হতে কিয়ামত পর্যন্ত আরোপিত ‘ জিহাদ ‘-এর মতো মহান বিধানকে’তো আমরা ভুলতেই বসেছি! পর্যদুস্ত, নির্যাতিত মুসলিম জনপদগুলোর জন্য শুধু দুআ ছাড়া কয়জনের-ই বা মনে ‘ জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ’র অসীম তৃষ্ণা জেগেছে? সুতরাং সবদোষ আল্লাহর উপর চাপিয়ে না দিয়ে, নিজেদের ব্যাকগ্রাউন্ডটা আরো একটু ভালোভাবে পর্যালোচনা করলেই সব পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে।ইনশাআল্লাহ।
তাই আসুন, এবার নিজেদের অবস্থার বিচার আমরা নিজেরাই করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
Sharing is caring!